বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে ১১ বছরেও হয়নি সম্মেলন
বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে ১১ বছরেও হয়নি সম্মেলন
বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল: সর্বশেষ ২০১১ সালে কমিটি হয় বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের। এরপর ১১ বছর পার হলেও একবারও সম্মেলন হয়নি সংগঠনের কোনো ইউনিটের। তাই দীর্ঘ সময় ধরে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের বাড়ি যে এলাকায়, সেই বরিশাল মহানগরে এরই মধ্যে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেই। একই অবস্থা জেলা কমিটিতেও। এদিকে জেলা কমিটির সভাপতি নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হওয়ায় নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে বরিশাল ছাত্রলীগ।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে ছাত্রলীগ। তাই এ সময়ে এসে নেতা-কর্মীদের দাবি, দ্রুত কমিটি গঠন করে যোগ্যদের নতুন করে নেতৃত্বের সুযোগ দেয়া হোক।
২০১১ সালে বরিশাল মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। মহানগরে সভাপতি জসীম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় তৌসিক আহম্মেদ রাহাতকে।
অন্যদিকে হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমনকে সভাপতি, আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক এবং শামসুদ্দোহা আবিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় জেলা কমিটি।
মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ২০১৪ সালের জুন মাসে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয় ১০৯ সদস্য নিয়ে। তবে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি নানা চেষ্টার পরও।
এই দুই কমিটির একাধিক নেতা বলেছেন, তারাও আর নেতৃত্বে থাকতে চান না। একজন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ঢুকেছেন, কয়েকজন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, বিয়েও করেছেন। আর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক দুই সন্তানের জনক। সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দোহা আবিদ অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছাত্র রাজনীতি থেকে।
মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পরই সাংগঠনিক সম্পাদক তৌছিক আহম্মেদ রাহাত ছাত্ররাজনীতি থেকে অবসরে যান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়ে।
দীর্ঘ বছর ধরে তারা জেলা ও মহানগরকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতি চাঙ্গা রেখেছেন। তাদের অনেকেই বর্তমানে বিবাহিত, ছাত্রত্বও হারিয়েছেন।
তাই এই ছাত্রলীগ নেতাদের অনুসারীরা পৃথক মিছিল করেছেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে।
এদিকে নতুন কমিটির আশায় দিন গুনতে গুনতেও অনেক নেতা-কর্মী হারিয়েছেন ছাত্রত্ব। তাদের মধ্যেও অনেকে বিয়ে করে সংসার পাতা শুরু করেছেন। তবে দীর্ঘ বছর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও কমিটি না পেয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে এসব ছাত্রলীগ নেতার।
তারা জানিয়েছেন, তাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যা করবেন সেটাই তারা মানবেন। তবে বরিশালের জন্য ছাত্রলীগের কমিটি জরুরি।
এদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগ নেতা দাবিদার নূর আল আহাদ সাঈদী ও মাহাদ দীর্ঘ সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও কমিটি না হওয়ায় কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিক উল্লাহ মুনিম বলেন, ‘দীর্ঘ সময় আমরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি না হওয়ায় বিএম কলেজসহ কোনো কলেজেরই কমিটি হয়নি। কমিটি ঘোষণা হলে চাঙ্গা ভাব থাকবে সংগঠনে।
‘আমরা সংগঠনের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি। নতুন কমিটি নবাগতদের আকর্ষণের বিষয়। সর্বপরি আমাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই আমরা সবাই মেনে নেব।’
মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মাইনুল হোসেন বলেন, প্রায় ১১ বছর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে বরিশালে ছাত্রলীগের যে কমিটি নেই, সেটা কাউকে বুঝতে দেইনি।
‘আমরা মানবিক কাজ থেকে শুরু করে টিকা কেন্দ্রগুলোতেও সহায়তা করেছি। তবে কমিটি গঠিত হলে সংগঠনের গতি আরও বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন দিতে চাই। আমরাও চাই নতুন কমিটি হোক, নতুন নেতৃত্ব আসুক। কেন্দ্র যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে বরিশাল ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্বে আসতে পারে।
‘যোগ্যদের হাতে দায়িত্ব দেয়া উচিত কমিটির দায়িত্ব। একই সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও গঠন করার দাবি জানাচ্ছি।’