নতুন আশায় শুরু ২০২২

পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত কুয়াকাটা, উৎসবমূখর পরিবেশ

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  05:16 AM, 01 January 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ মহাকালের আবর্তে বিলীন হতে যাচ্ছে ২০২১ সাল। এ বছরের সকল দুঃখ-বেদনা ভুলেমধ্যরাতে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন আশা নিয়ে শুরু হলো ২০২২ সাল। ইংরেজি নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে কুয়াকাটায় পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। ইংরেজি পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আগতরা ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন অনেকে। ছোট্ট পরিসরে দু’একটি রিসোর্ট সেন্টারে রয়েছে বিশেষ কনসার্ট। করোনা কাল হিসেবে ২০২১ যদিও সকলমানুষের কাছে এক বিষাদময় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেল।

তারপরও সৈকতের বেলাভূমে ভিড় করেছেন অসংখ্য পর্যটক। বছরের নতুন সূর্যোদয়কে অবলোকনে এরা অপেক্ষা করছেন রাতভর। দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকও রয়েছে কুয়াকাটায়। থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রয়েছে থানা পুলিশেরও বিশেষ উদ্যোগ। হোটেল-মোটেলগুলোর অধিকাংশ কক্ষগুলোয় এখন পর্যটকের ভিড় লক্ষ্যণীয়।

আধুনিক মানের হোটেলগুলোতে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। তবে সৈকতে বিদ্যুতবিভাগের নিজস্ব আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতে সৈকতে আসা পর্যটকরা ভীতিকর পরিবেশের কবলে পড়েন। তবে পর্যটকের ভিড়ে গোটা সৈকত এলাকা এখন মুখর রয়েছে। বছরের শেষ সূর্যাস্ত এবং নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখে স্মরণীয় করে রাখতে প্রকৃতিপ্রেমী এসব মানুষের আগমন ঘটেছে কুয়াকাটায়। একটি নতুন করোনামুক্ত বছরকে যেন স্বাগত জানাতে ভিড় করেছেন হাজারো পর্যটক-দর্শনার্থী।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক দানিয়েল দম্পত্তি জানান, থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছেন।

২০২১ সালের শেষ সূর্যোদয় উপভোগ করেছেন। সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ। করোনা মুক্তির প্রত্যাশাসহ নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি দেশের সকল মানুষকে।

আবাসিক হোটেল মোটেল সুত্রে জানা গেছে, সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস, ওশান ভিউ কনভেনশন, কুয়াকাটা গ্রান্ড, খান প্যালেস, কানসাই ইন হোটেলসহ বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলের রুমে গেস্ট ছিল। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেনীর হোটেল গুলোতে অসংখ্য পর্যটকের ভিড়ের মাঝেও রুম এখনও খালি রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষ। খাবার হোটেল গুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। তবে খাবারের মান এবং অতিরিক্ত রুম ভাড়া নেওয়ার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এদিকে হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে সেজন্য রুমের মুল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা ছিল বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের। কক্সবাজারের মত কুয়াকাটায় যেন কোন অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য বিশেষ নজরদারী ছিল প্রশাসনের তরফ থেকে। পর্যটন পুলিশ, থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশ অসংখ্য পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল চোখে পড়ার মতো।

হোটেল মোটেল ব্যবসায়িদের সুত্রে জানা গেছে, খোলা স্থানে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নেই কোন আয়োজন। তবে সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস সহ কয়েকটি অভিজাত আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য ইনডোরে ডিজে পার্টি, কনসার্ট, ফানুস উৎসব ও খাবারের উপর বিশেষ প্রনোদনা প্যাকেজ ছিল। নতুন বছরে সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন অনেক পর্যটক।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, পায়রা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। কক্সবাজারে ঘটনায় কোন প্রভাব পরেনি কুয়াকাটায়। এবছর থার্টিফাস্ট নাইটে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। আগত পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট আন্তরিক।

সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস’র জেনারেল ম্যানেজার মো. আল আমিন খান উজ্জল বলেন, থার্টিফাস্ট নাইটে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ প্রনোদনা অফার রয়েছে। ১২’শ টাকার টিকিটে ৩০-৩৫ আইটেমের গালা ডিনার। এর সাথে উপভোগ করবেন লাইভ কনসার্ট, ডিজে পার্টি ও ফানুস উৎসব। তিনি আরও জানান, রিসোর্টের ৯০ ভাগ রুমে গেস্ট রয়েছে।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো.শাহ আলম হাওলাদার জানান, তাদের সমিতির আওতাভূক্ত আবাসিক হোটেলের ৯০ ভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে। তবে কোন হোটেল মালিক যেন পর্যটকের ভিড়কে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে পারে এজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, ইংরেজি নতুন বছরে অসংখ্য পর্যটকের আগমনকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারীতে সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্পটগুলোতে।

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক বলেন, আবাসিক হোটেল মোটেল গুলোতে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে এজন্য ভাড়ার মুল্য তালিকা টানিয়ে রাখাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।

আপনার মতামত লিখুন :