সেই সজলের পুলিশ ভেরিফিকেশনে ‘লাখ টাকা ঘুস দাবি’

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:26 PM, 29 December 2021

অনলাইন ডেস্কঃ ভূমিহীন হওয়ার জটিলতার রেশ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবশেষে চাকরি পেয়েছেন সজল কর্মকার। তবে চাকরির ফাইনাল পুলিশ ভেরিফিকেশনে লাখ টাকা ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে বেতাগী থানার এসআই হারুন অর-রশিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চিন্তিত সজলের পরিবার।সজলের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতার মারফত এক লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন বেতাগী থানার এসআই মো. হারুন অর-রশিদ ফরাজী।

পরে সজলের বাবা বেতাগী থানায় পুলিশ ট্রেনিংয়ে যোগদানের নোটিশপত্র আনতে গেলে তার কাছে পরিমাণ কমিয়ে সর্বশেষ ৫০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করে এসআই হারুন বলেন, খরচ না পেলে (৫০ হাজার টাকা ঘুস) ভেরিফিকেশনে সমস্যা হবে কিন্তু!সজলের বাবা অমল কর্মকার বলেন, এসআই হারুন স্যারের এমন প্রশ্নে আমি বলি- টাকার ব্যাপারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও রিপন (আওয়ামী লীগ নেতা) কথা বলবেন। আমি টাকা পাব কোথায়? জানেনই তো! কত জটিলতা কাটিয়ে ছেলেটার (সজলের) চাকরি হয়েছে। পরে এসআই হারুন স্যার বলেন, আপনি ব্যবস্থা করেন, টাকা কী তারা দেবে? পরে আমি বলে এসেছি স্যার আপনি কাগজপত্র পাঠান। আমার নিজের সামর্থ্য নেই, আমি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানাব।সজলের চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রথম থেকেই সংবাদ প্রচার করে আসে । খোঁজখবর রাখে সজলের পরিবারের। চাকরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় ধারাবাহিক সংবাদ। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসলে চাকরি পান সজল। ইতোমধ্যে পুলিশ ট্রেনিংয়ের যোগাদানপত্রের নোটিশ হাতে পেয়ে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে বরগুনা পুলিশ লাইনে উপস্থিত হয়েছেন সজল।

এদিকে চাকরির ভেরিফিকেশনে ঘুস বাণিজ্যের গুঞ্জন ওঠে সজলের এলাকায়। অনুসন্ধান করে যুগান্তর। হাতে পান নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।এসআই হারুনের ঘুস দাবির ব্যাপারে খোঁজ নিলে মুখ খোলেন ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খান এবং ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, শুরু থেকেই এক লাখ টাকা চাচ্ছেন বেতাগী থানার এসআই হারুন। চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর বারবার ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিতে বলতেছেন। আমি একজন চেয়ারম্যান হিসেবে কীভাবে এই টাকা এনে দেই? ওদের পরিবার যথেষ্ট অসচ্ছল। টাকা পাবেই বা কোথায়? আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেন কথা বলে কীভাবে কী করা যায়। এ নিয়ে ফোনে না, সামনা-সামনি কথা বলব।হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সজলের পরিবার ভূমিহীন হওয়ায় চাকরি হবে না শুনে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে আমি নিজেই ২ শতাংশ জমি দান করেছি। এখন আমাকেই এসআই হারুন বলেন- সজলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে অন্তত ৫০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দিতে। তা না হলে ফাইনাল ভেরিফিকেশন আটকে দেবেন বলেও জানান তিনি।

সজলের বাবা অমল কর্মকার আরও বলেন, নানা সমস্যার মধ্যে ছেলে সজলের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে। ঘুসও দিতে পারব না। কারও কাছে অভিযোগও তো দিতে পারব না। কীভাবে কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কল করা হলে বেতাগী থানার এসআই হারুন অর-রশিদ ফরাজী সব শুনে বলেন, আমি গাড়িতে আছি পরে এ নিয়ে কথা হবে, আমি খুব ব্যস্ত। পরে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।বেতাগী থানার ওসি মো. শাহআলম হাওলাদার বলেন, এমনটি যদি করে থাকেন তবে তিনি অন্যায় করেছেন। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ভেরিফিকেশনে ঘুস দাবি করে তিনি মারাত্মক অন্যায় করেছেন। তাছাড়া সজলের চাকরি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বরগুনা পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :