জুনে শেষ হচ্ছে বরিশাল-খুলনা ‘৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু’
‘ক্লোজিং সেগমেন্ট’ ঢালাইয়ের মাধ্যমে দু পাড় যুক্ত হল
বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর ‘৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু’র ‘ক্লোজিং সেগমেন্ট’ ঢালাই সম্পন্ন হবার মধ্যে দিয়ে দুটি বিভাগের মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগের নতুন দ্বার উন্মচিত হয়েছে। মঙ্গলবার শেষ রাতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘ চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পনীজ লিমিটেড’এর প্রকৌশলীগন ছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সহ সড়ক অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে ‘প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট বক্স গার্ডার’ টাইপের সেতুটির সুপার স্ট্রাকচারের সবশেষ অংশের ঢালাইয়ের মধ্যে দিয়ে মূল প্রকল্পটির ৮৫% কাজ সম্পন্ন হল।
একের পর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ সহ করেনা মহামারী সংকটে নির্মান কাজ বছাধীক কাল পিছিয়ে পড়লেও আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে সড়ক অধিদপ্তর আশা করছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সাথে লক্ষ্মীপুর-ভোলা হয়ে মোংলা বন্দর ছাড়াও বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। ফলে ঢাকাÑচট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই হ্রাস পাবার পাশাপাশি ৩টি উপকূলীয় বিভাগের সড়ক পথের দুরত্বও ৩০Ñ৫০ ভাগ হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। দেশে চীনা অনুদানে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন ৮ম এ মৈত্রী সেতুটির জন্য চীন সরকার ৬৫৪ কোটি টাকা সম্পূর্ণ অনুদান প্রদান করেছে। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর চীনা প্রেসিডেন্ট-এর বাংলাদেশ সফরকালে ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটি নির্মানে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ডিপিপি প্রস্তুত সহ একনেক-এর অনুমোদনে বিলম্বের কারণে ভ’মি অধিগ্রহনও পিছিয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরুতেই যথেষ্ঠ বিলম্ব ঘটে।
সেতুটির নকশা প্রনয়ন থেকে নির্মান কাজ সবই চীনা প্রকৌশলীদের দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। কঁচা নদীর ওপর প্রায় ৪৫ ফুট প্রসস্ত ও দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ সেতুটির নদীর মূল অংশে ৯৯৮ মিটারকে উভয় প্রান্তে আরো ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট-এর মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেতুটির দুই প্রান্তে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়ক সহ পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে রাখতে আরো ২টি সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। এ জন্য ১৩.৩১ হেক্টর জমি অধিগ্রহন করতে হলেও সেতুটির পিরোজপুর প্রান্তে বাইপাস সড়ক নির্মানের মাধ্যমে মহাসড়কে সংযুক্ত করার বিষয়টি অনিশ্চতার মধ্যে থাকায় শহরের যানযট আগামীতে কোন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌছবে তা নিয়ে শংকিত সড়ক বিশেষজ্ঞগন।তবে পিরোজপুর বাইপাস নির্মােণর সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সম্পন্ন হলেও মাত্র সাড়ে ৪ কিলোমিটার বাইপস সড়ক নির্মানে কোন ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে দাখিল করা হয়নি। ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিয়ার বিশিষ্ট এসেতুটি সর্বোচ্চ জোয়ারের চেয়ে ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মত হচ্ছে। ফলে সেতুটির তলদেশ দিয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে মোংলা সমুদ্র বন্দর সহ খুলনা নদী বন্দরের পণ্য ও জ্বালানিবাহী বড় মাপের নৌযানের পাশাপাশি নৌ বাহিনীর ফ্রিগেট সহ যেকোন ধরনের যুদ্ধ জাহাজের চলাচলেও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
কঁচা নদীর মধ্যভাগে সেতুটির তলদেশে সবচেয়ে বড় স্প্যানটিতে ১২২ মিটার এলাকা নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এক হাজার ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটির ৯২টি পাইল ও ১০টি পাইলক্যাপ ছাড়াও ভায়াডাক্ট সহ সেতুর সব পাইল নির্মান কাজ সম্পন্ন করে সুপার স্ট্রাকচারের বক্স গার্ডারের ঢালাই সম্পন্নের মাধ্যমে । মূল সেতুর ১০টি পিয়ার এবং ভায়াডাক্টের ১৫টি পিয়ারও সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির উভয় প্রান্তে প্রায় ৬শ মিটার নদী শাষন সহ টোল প্লাজার কাজও চবলছে। একইসাথে সংযোগ সড়কের ‘ওয়ারিং কোর্স’ সম্পন্ন করে আগামী মাসের মধ্যেই বিটুমিনাস কার্পেটিং কাজ শুরু হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন।