নৌপথে নিরাপত্তাহীনতায় দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রী
পুরনো আমলের প্রযুক্তি দিয়ে চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান
অনলাইন ডেস্কঃ নৌপথে লাখো যাত্রীর জীবন নিরাপত্তাহীন। নৌযানে অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো ব্যবস্থা। পুরনো আমলের প্রযুক্তি দিয়ে চলছে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলো। অগ্নিনির্বাপণে নৌ শ্রমিকদেরও নেই কোনো প্রশিক্ষণ।এ কারণে নৌযানে দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় বহু মানুষের। বিশেষ করে ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে ৪৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের। নৌযানে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা প্রবর্তন এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পাশাপাশি নৌ শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। এদিকে সব নৌযানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় যেতে নৌপথ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এসব অঞ্চলের লাখো যাত্রী যাতায়াত করেন নৌপথে। বরিশাল-ঢাকা, পটুয়াখালী-ঢাকাসহ অন্যান্য রুটে চলাচলকারী নৌযানগুলো সাজসজ্জায় আধুনিক এবং বিলাসবহুল।বরিশাল-ঢাকা রুটের অনেক নৌযানকে ‘জলের মধ্যে ৫ তারকা হোটেলের’ সঙ্গে তুলনা করে সম্প্রতি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অর্থনীতিবদ ড. নাজনীন আহমেদ। বিলাসী সেবা দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচে যাত্রীবাহী নৌযান নির্মাণ করা হলেও যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা নেই নৌযানগুলোতে।বিশেষ করে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানে অগ্নিকান্ড ঘটলে তাৎক্ষণিক অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাই নেই তাদের হাতে।
মান্ধাতা আমলের ফায়ার স্টিউঙ্গুসার, বালুর বালতি এবং হোসপাইপ অগ্নিনির্বাপণের একমাত্র ভরসা নৌযান শ্রমিকদের।এসব সরঞ্জামাদি দিয়ে ছোটখাটো আগুন নেভানো সম্ভব হলেও বড় ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাই নেই নৌযানগুলোতে। যাত্রী এবং নৌযান শ্রমিকদের জীবন রক্ষায় এখনই আধুনিক প্রযুক্তি প্রবর্তনের দাবি জানিয়েছেন বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. মজিবর রহমান।আধুনিক প্রযুক্তি থাকলে নৌযানের আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন একই রুটের এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. শামীম আহমেদ।একই সঙ্গে নৌযান শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে প্রশিক্ষণও জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তারা। ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে ৪৪ জন মানুষের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে নৌযান মালিকদের।
এ ধরনের ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস এবং নৌ পরিবহন অধিদফতরের সমন্বয়ে যুগোপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নৌযান শ্রমিকদের অগ্নিনির্বাপণে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার (যাপ) পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, সব নৌযানে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আছে। সব জাহাজে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি এবং শ্রমিকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক। কেউ নিয়মের ব্যত্যয় করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝলকাঠিতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক যাত্রী দগ্ধ হয়েছে। এর আগে গত ১২ নভেম্বর ঝালকাঠিতে তেলের জাহাজে বিস্ফোরণে ছয়জনের মৃত্যু হয়।এ ছাড়া ২০১৯ সালে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলের জাহাজে বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং পাঁচজন শ্রমিক দগ্ধ হয়।