দেশের ১০ জেলায় আমনের ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ
অনলাইন ডেস্কঃ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদসৃষ্ট প্রবল বর্ষণে ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার আমন ধান। এর মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের চার জেলায় ৭৮ হাজার ৪২৯ হেক্টর ও যশোর অঞ্চলের ছয় জেলার ৯৪ হাজার ৫৩৮ হেক্টর আবাদি জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদকৃত আমন ক্ষতির শিকার হয়েছে।দেশের জেলাগুলোকে কয়েকটি কৃষি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। এ ১০ জেলার মধ্যে যশোর ও বরিশাল অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রবল বর্ষণে যশোর অঞ্চলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা। বরিশাল অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালী।ঘূর্ণিঝড়সৃষ্ট অকালবর্ষণে আমনের চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে বলে ডিএই সূত্রে জানা গিয়েছে।বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফসলের ৭৮ হাজার হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায় থেকে প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। আক্রান্ত জমির মধ্যে রোপা আমন প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এবং খেশারী ডাল ২৬ হাজার হেক্টর।
এছাড়াও শীতকালীন সবজী সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর, সরিষা ২ হাজার ১৫৬ হেক্টর, মুসর ডাল ৫৭৩ হেক্টর, গোল আলু ৩৮৮ হেক্টর, বোরো বীজতলা ২৩৫ হেক্টর, গম ২০৩ হেক্টর এবং ১০৫ হেক্টরের মরিচ ছাড়াও কিছু বোরো বীজতলা সহ অন্যান্য ফসল রয়েছে।তবে এসব ফসলের ঠিক কতভাগ আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে তা বুঝতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আমন ধানের আক্রান্ত জমির কিছু ফসল মাটিয়ে নুয়ে পড়ছে। এসব জমির ধান চিটা হতে পারে। এছাড়া আমনের বড় ধরনের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে জমিতে পানি আটকে থাকায় আমনের সাথী ফসল খেশারী ডালের কিছু সমস্যা হতে পারে। এছাড়া শীতকালীন সবজী ও গোল আলু সহ যেকোন রবি ফসলের জমিতে পানি আটকে গেলে তাও ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকার কথা জানান হয়েছে। তবে বুধবার থেকে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।এবার খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৮ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, সেখানে উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টন চাল। এছাড়া কিছু বোরো বীজতলার ক্ষতি হলেও তা পূণর্বাশনের যথেষ্ট সময় রয়েছে। এছাড়া রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ রয়েছে।
চলতি বছর সারা দেশে আমন মৌসুমের ধান-চাল উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য হাতে নিয়েছিল ডিএই। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে লক্ষ্য পূরণ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশে ৫৬ লাখ ২৫ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমি থেকে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৩ টন চাল উৎপাদন হয়। এ সময় আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। আমন মৌসুমের উৎপাদনে এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রাখার পরিকল্পনা করেছিল ডিএই। চলতি অর্থবছরে আমন মৌসুমে ৫৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছিল সংস্থাটি। এরই মধ্যে দেশের প্রায় ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। দেশে আমন মৌসুমের ধান-চালের বড় একটি অংশ আসে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। চলমান প্রেক্ষাপটে জাওয়াদের প্রভাবে সৃষ্ট অকালবর্ষণে আমন ধানের ক্ষতির মাত্রা দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারণ করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে যশোর ও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলোর পুরোপুরি নষ্ট হওয়া ধানের পরিমাণ কম বলে জানিয়েছেন ডিএইর কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানেই সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। কোথাও কোথাও আক্রান্ত ফসল থেকে কিছু কিছু ধান উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
উত্তরের জেলাগুলোয় এবং উপকূলীয় বেশকিছু জেলায় বেশির ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টিতে অল্প কিছু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে বীজ রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে। খড়েরও কিছু ক্ষতি হবে। আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কৃষকরা যাতে ধান দ্রুত কেটে ফেলেন। কিছুটা শ্রমিকস্বল্পতা ও আমন জমিতে শুকিয়ে কাটার প্রবণতার কারণে কিছু ধান ক্ষেতে রয়ে গিয়েছে। ফলে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে আমন ধানে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা কম। এছাড়া চলতি রবি মৌসুমে যেসব শস্য এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে, বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও সেগুলোর উপকার হবে। যা লাগানো বাকি আছে, বৃষ্টিতে জমি ভেজা থাকার কারণে তা রোপণে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে মাটি সিক্ত থাকায় লাগানোর পর সেগুলোয় দ্রুত ফলন পাওয়া যাবে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ উপকূলে আঘাত হানার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটির গতকাল মধ্যরাতে ভারতের উড়িশা উপকূল অতিক্রম করার কথা। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে গতকাল সকালে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। তবে আজ থেকে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে। এছাড়া তাপমাত্রা কমে শীত বাড়তে পারে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও শস্যের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা প্রয়োজন, যাতে চালের কোনো ঘাটতির সম্ভাবনা থাকলে সহজেই সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে থাকার উদ্যোগ নিতে হবে। বীজ, সার ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকি কার্যক্রম থেকেও কৃষকদের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।