বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম ট্রিপেই নৌযান চলাচলে দুর্ভোগে যাত্রীরা

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  02:39 AM, 04 December 2021

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দশ বছর পরে উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে সরকারী উদ্যোগ নিয়ে আজানা অনিশ্চয়তায় যাত্রীরা প্রথম ট্রিপেই বিফল হল বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের নব নির্মিত উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’এর পরিক্ষামূলক যাত্রা।ফলে প্রায় দশ বছর বন্ধ থাকার পরে উপক’লীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করার সরকারী উদ্যোগ নিয়ে আজানা অনিশ্চয়তায় যাত্রীরা। ১২ ঘন্টায় প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটারের বিশাল উপক’লীয় নৌপথ পাড়ি দেয়ার কথা বলা হলেও ঘন্টায় ১৮.৫২ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন নৌযানটি প্রায় ২০ ঘন্টায় চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌছেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে প্রথম ট্রায়াল ট্রিপে যাত্রা করে শুক্রবার সকাল ৫টায় বরিশাল বন্দরে নোঙর ফেলেছে তাজউদ্দিন আহমদ। পথিমধ্যে হাতিয়াতে এক ঘন্টার যাত্রা বিরতি ও ভোলার ইলিশা ঘাটের ভাটিতে চর গজারিয়ার কাছে মেঘনার নাব্যতা সংকটে নৌযানটি দু দফায়য় প্রায় সাড়ে প্রায় ৩ ঘন্টা নোঙরে ছিল।শুক্রবার রাত ১০ টায় এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ফিরতি ট্রিপে বরিশাল বন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করার কথা। প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ ও ৩৯.৩৬ ফুট প্রস্থ এ নৌযানটিতে বিআইডব্লিউটিসি এবং বিঅইডব্লিউটিএ’র বানিজ্য, মেরিন ও প্রকৌশল শাখার বেশ কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন।এ ট্রায়াল টিপের ফলাফল বিশ্লেষন সহ সব কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করে বরিশালÑচট্টগ্রাম উপক’লীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সময়সূচী ও যাত্রী ভাড়া নির্ধারন করা হবে বলে বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।এমনকি সার্ভিসটি কবে থেকে নিয়মিত বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে বানিজ্যিক পরিচালন শুরু করবে সে সম্পর্কে এখনো কিছু বলতে পারেনি সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। তবে চলতি মাসের মধ্যোই সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহন শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধান ।

১৯৬৪ সালে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মেনী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশালÑনারায়গঞ্জÑচট্টগ্রাম ও বরিশালÑহাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে উপক’লীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে।ঐসব নৌযানের মধ্যে ‘এমভি মনিরুল হক’ ও ‘এমভি আবদুল মতিন’ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পূর্ণবাশনও করা হয়। কিন্তু ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ঐসব নৌযান বেশীদিন নির্বিঘ্নে চলেনি।ফলে ২০১১ সালের মাধ্যভাগ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম উপকূলীয় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ২০০২ সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলীয়া’ নৌযানটিরও কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটি শুরু হয়। ইতোমধ্যে দু দফায় ভারি মেরামত ও পূণর্বাশন শেষে সম্প্রতি এ নৌযানটিও যাত্রী পরিবহনে ফিরেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপক’লীয় নৌযোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে ৭শ ও ৫শ যাত্রী ধারন ক্ষমতায় দুটি উপক’লীয় নৌযান সংগ্রহের লক্ষে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যায় সাপেক্ষ ডিপিপি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে।প্রায় এক বছর পরে ৭শ যাত্রী বহনক্ষম উপক’লীয় নৌযান এমভি তাজউদ্দিন আহমদ নির্মানের লক্ষে বিআইডব্লিউটসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড এন্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র সাথে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে নির্মান কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তিন দফায় ৪ বছর সময় বাড়িয়ে ৬৮ মাস পরে গত এপ্রিলে নৌযানটি হস্তান্তর করা হয়েছে। গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এমভি তাজ উদ্দিন আহমদ’ নামের এ নৌযানটি আনুষ্ঠনিক উদ্বোধন করেছেন।

সে থেকে এমভি তাজ উদ্দিন আহমদ বরিশাল রুটে চালু করার কথা থাকলেও তার রানিং মেট হিসেবে যে ‘এমভি বার আউলীয়া’কে নির্ধারন করা হয়েছে সেটির নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ মেরামত সম্পন্ন করতে বিলম্বের কারণে তা ক্রমাগত পেছাতে থাকে। দুটি নৌযানই প্রস্তুত হবার পরে প্রথমে ২৫ নভেম্বর ও পরে ২ ডিসেম্বর ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১০ বছর পর বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে পরিক্ষামূলক পরিচালন শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।সে আলোকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নৌযানটি প্রায় ৬০৬ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করে পাথিমধ্যে হাতিয়ায় ঘন্টাকাল যাত্রা বিরতি করে মাত্র সাড়ে ১৯ ঘন্টায় বরিশালে পৌছেছে। নৌযানের এ দীর্ঘ সময়ের ভ্রমনকে যাত্রীরা ‘যথেষ্ঠ বিরক্তিকর, বিব্রতকর ও দূর্ভোগের নৌ ভ্রমন’ বলে মন্তব্য করেছেন।এ ব্যাপারে নৌযাটিতে ভ্রমনরত বিআইডব্লিটিসির ডিজিএম গোপাল মজুমদার বলেন, ‘আমরা সব কিছু পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে পরবর্তি পদক্ষেপ নির্ধারন করব। তবে নৌ পথে নাব্যতা সংকট ও নৌ সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা’র ওপরও গুরুত্বারেপ করেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :