সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক পেলেন জিয়াউল আহসান

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  10:54 PM, 22 November 2021

সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক পেলেন জিয়াউল আহসান

প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত অদম্য দেশমাতৃকার সৈনিক, বরিশালের কৃতি সন্তান অত্যান্ত মেধাবী ও চৌকস কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান (এফপিপি, বিপিএম বার, পিপিএম বার) এ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদক পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মসীকৃত খুনিদের গ্রেফতার এবং তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।

রবিবার (২১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স প্রান্তে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানকে ২০২০-২০২১ সালের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ শান্তিকালীন প্রাপ্ত এই পদক তাঁকে প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

অকুতোভয় স্বাধীনতার দেশপ্রেমিক জিয়াউল আহসান ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম নাসির উদ্দিন আহমেদ বরিশাল শহরের একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মাতা মরহুম হোসনেয়ারা বেগম বরিশালের অন্যতম প্রচীন ও সুনাম সমৃদ্ধ স্কুল সিস্টারস্ ডে প্রাইমারির স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। বরিশালের সম্ভ্রান্ত ও সুশিক্ষিত এক বৃহৎ পারিবারিক বলয়ের পাঁচবোন এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে জিয়াউল আহসান পিতার চতুর্থতম সন্তান। ১৯৮৫ সালে তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৭ সালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিমিওলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক অফিসার হিসেবে কমিশন্ড লাভ করেন এবং দেশের বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণসহ মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাডিগ্রী ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ইতোপূর্বে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার, প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার এবং পদাতিক ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িতে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস, জালালাবাদ সেনানিবাসের স্পেশাল ওয়ারফেয়ার উইংয়ের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া জাতিসংঘ মিশনে উল্লেখযোগ্য অবদানসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে মেজর পদে প্রেষণে বদলি হয়ে প্রথমে ২০০৯ সালে ৫ মার্চ র‌্যাব-২ এর উপ-অধিনায়ক পদে নিযুক্ত হন। পরের বছর ২০১০ সালের ২৭ আগস্ট র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর র‌্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অপারেশন) দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন।

জিয়াউল আহসান কাজের মাধ্যমে তাঁর মেধা, সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। ফলে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে শোষণ ও দারিদ্রমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ন্যায়বিচার ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার অসামান্য আত্মত্যাগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাঁকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নাতি দেয় এবং ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে নতুন পদায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে ২৮ এপ্রিল তিনি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালক ও পরবর্তীতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের পদে যোগদান করেন। এখন পর্যন্ত তিনি (এনটিএমসি) পরিচালক পদে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অভিযুক্তকে তড়িৎগতিতে আটকসহ বহু দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সুনিপুণ কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিষ্ঠার সাথে কাজের মাধ্যমে দৃঢ় দেশপ্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। দেশের সংকটমুহূর্তের সুষ্ঠু ও নিশ্চিত সমাধান ভূমিকায় নিজেই গড়ে তুলেছেন নিজের সার্থকতার পাহাড়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মানজনক বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য দুইবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) সম্মাননা লাভ করেন। জিয়াউল আহসানই বাংলাদেশের একমাত্র কর্মকর্তা যিনি এককভাবে টানা চারবার পুলিশের সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক অর্জন করতে সক্ষম হন। এযাবৎ তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, সিয়েরালিওন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, ইংল্যান্ড এবং চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো এবং স্কাই ডাইভার হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।

জিয়াউল আহসান বরাবরই জীবনের বাজি রেখে দেশ মাতৃকার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বাংলাদেশের অপরাধ দমনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সংস্থা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানে (র‌্যাব) দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের ক্রান্তিকালে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর দায়িত্ব শতভাগ নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও জটিল সমস্যা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করেছেন। জিয়াউল আহসান তাঁর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের এক আতংকে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর চিন্তা চেতনা, বিশ্বাস ও তুখোড় মেধা দিয়ে একের পর এক জঙ্গি হামলা বানচাল করতে সফল হয়েছেন এবং জঙ্গি দমনে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছেন। তিনিসহ তাঁর সংশ্লিস্টদের এই সফলতায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে বাংলাদেশে জঙ্গিদের তৎপরতা ও নৃশংস নেটওয়ার্ক। বলা যায়, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের এক জীবন্ত আতংকের নাম জিয়াউল আহসান।

র‌্যাবে কর্মরত থাকার সময় জিয়াউল আহসান চাঞ্চল্যকর রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পলাতক রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করেন। এ ছাড়া তিনি হলমার্ক কেলেংকারির মূলহোতা তানভীর মাহমুদকে গ্রেফতার, সোনালী ব্যাংকের লুণ্ঠিত ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা উদ্ধারসহ বেশ কয়েকটি বড় অভিযানে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতের তা-ব দমনে রাতের অন্ধকারে জীবনবাজি রেখে আইনশৃংখলা বাহিনীর যৌথ অভিযানের সময় সম্মুখভাগে নেতৃত্ব দিয়ে অনন্য সাহসিকতা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত থাকার সময় গুলশানের হলি আর্টিজানের বর্বরোচিত হামলার পর তাকে তদন্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয়ের জন্য প্রধান সমন্বয়ক নিয়োগ করা হয়। অপরদিকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের জরুরি অবতরণের ঘটনায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তিনিই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ছায়া অনুসন্ধানকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এভাবেই তিনি র‌্যাবে কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়েও সারাদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও সদা হাস্যোজ্জ্বল বন্ধুবৎসল দরদী জিয়াউল আহসানের সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং বিভিন্ন সময় তাঁর সফল অপারেশনে ক্ষতিগ্রস্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা তার শত্রুতে পরিণত হয়ে ওঠে। জঙ্গিরা তাকে হেনস্থা করার জন্য সু-পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে সাইবার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। জিয়াউল আহসান এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থার ঠিকানা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট একটি মহল এই মেধাবী, সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অশালীন মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল সরকারী-বেসরকারী সূত্র ব্যবহার না করে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ বা গ্রহণের চেষ্টা না করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান সম্পর্কে ষড়যন্ত্রমূলক বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে তার অদম্যতাকে দমিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। একটি স্বাধীন দেশের অহংকার ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমাদের সেনাবাহিনী। আমাদের গর্বের সেই সেনাবাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অর্থ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং সুশৃঙ্খল এই বাহিনীকে কলংকিত করার অপপ্রয়াস।
চৌকস ও মেধাবী সেনা অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান রাষ্ট্রীয়ভাবে, কর্মক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সুনামে একজন সফল নাগরিক ও দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানের বড়ভাই জিয়াউল হক ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন। ছোটভাই জিয়াউর রহমান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং তাঁর পাঁচবোনদের মধ্যে বড়বোন নাছরিন নাহার একজন গৃহীনি, মেজবোন নাজমুন নাহার ঢাকা মোহামমদপুর বালক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক, সেজবোন নাজনিন নাহার একজন সফল আইনজীবি, পরের বোন লুৎফুন নাহার ঢাকা ইডেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সে নজরুল সংগীত ও আধুনিক গানের অন্যতম গায়ক, সর্বকনিষ্ট বোন শামছুন নাহার অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে বিদেশে অবস্থান করছেন। সর্বোপরি বলা যায়, জিয়াউল আহসান পারিবারিকভাবে তিনি এক রতœগর্ভা মায়ের সন্তান ও সৎ ধর্মপ্রাণ মানুষ। কেননা তাঁর এবং ভাইদের সৎ-উপার্জনের অর্থায়নে ঝালকাঠি জেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের শিরজুগের পৈত্রিক বাড়িতে তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘নাসির উদ্দিন ই এতিমখানা ও হাফিজি মাদরাসা’ এখানকার অন্যতম মাদরাসা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

আপনার মতামত লিখুন :