উৎসবমুখর পরিবেশে বরিশালের ১২ ইউপিতে ভোট সম্পন্ন
আ'লীগ ৯, হাতপাখা ১, স্বতন্ত্র ২
এইচ আর হীরাঃ উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ও সহিংসতা ছাড়াই এই প্রথমবারের মতো বরিশালে কোনো নির্বাচন দেখলেম এইটা আমাদের সৌভাগ্য। এমনিভাবেই আবেগে আপ্লূত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নে ভোট দিতে আসা সরকারি চাকুরীতে অবসরপ্রাপ্ত ষাটোর্ধ সালাম মিয়া। তিনি বলেন ,আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
তার কঠোর পদক্ষেপেই আজ আমরা সকলে এরকম সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার পেয়েছি। গতবারও আমার ভোট আমি দিতে পারিনি কিন্তু এবার আমার ভোট আমি নিজেই দিয়েছি। সেই সঙ্গে তিনি প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দ্বিতীয় ধাপে বরিশাল জেলার ৩ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোট নিরবচ্ছিন্নভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কার্যকর করা হয়। সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
বিশেষ করে প্রতিটি কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পেরে খুশী ছিলো ভোটাররা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটি কেন্দ্রে আনসার ও পুলিশ সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছেন। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আলম জানান, সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করার জন্য বরিশালের প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নিরাপত্তার বিষয়ের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবু ৩ হাজার ৪৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী মনিরুজ্জামান চশমা প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৪৪৪ ভোট এবং হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী বরকত উল্লাহ কাছেমী ৩ হাজার ১৫৩ ভোট পেয়েছেন। চাঁদপুরা ইউনিয়নে আনারস প্রতীক নিয়ে জাহিদ হোসেন ৪ হাজার ৩৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আলী আজিম খান ২ হাজার ৯৩৫ এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন খান ২ হাজার ৭৯৭ ভোট পেয়েছেন। চরকাউয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ৭ হাজার ৪৬২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আহম্মদ আলী তালুকদার ৫ হাজার ৭২৪ ভোট পেয়েছেন। চরমোনাই ইউনিয়নে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ জিয়াউল করিম ১০ হাজার ৩৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলাম ৬ হাজার ৯০১ ভোট পেয়েছেন।
চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের প্রার্থী সিরাজুল হক ৩ হাজার ৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী অলিউর রহমান ২ হাজার ৫২৫ এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমান ২ হাজার ৪৫৫ ভোট পেয়েছেন। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্না ৫ হাজার ৭৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীক নিয়ে রুবেল হোসেন মামুন ৪ হাজার ৬৫৩ ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন ৩ হাজার ৬২০ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার মৃধা ৮ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক আনারস প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৭১৭ ভোট এবং হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী কবির হোসেন ৪৩০ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা প্রতীকের বিজয়ীরা হলেন- আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ইলিয়াস তালুকদার, বাকাল ইউনিয়নের বিপুল দাস, বাগধা ইউনিয়নের আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি, গৈলা ইউনিয়নের শফিকুল হোসেন ও রত্নপুর ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফা সরদার।উল্লেখ্য, বরিশালের ৩ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ১১৪টি কেন্দ্রের ৬৯৮টি কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোটগ্রহণ। ১২ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯২২ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৬৪ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ জন নারী ভোটার ছিলো।