শেষ মুহূর্তে বরিশালের ৬ ইউপিতে উত্তাপ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বিতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ঠিক আগে নগর ঘেঁষা সদর উপজেলার ৬টি ইউপিতে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও আছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। ইতিমধ্যে চরমোনাই, রায়পাশা-করাপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে সংঘাত ঘটেছে। নির্বাচনের আগে ভোটার বাগাতে ভূরিভোজেরও আয়োজন করেছে সায়েস্তাবাদে নৌকার প্রার্থী। এ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে সেখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংখলাবাহনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।বরিশাল নির্বাচন অফিসের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনে প্রচার বন্ধ। সদরের ৬টি ইউনিয়ন যথাক্রমে চরমোনাই, চরকাউয়া, চন্দ্রমোহন, চাদপুরা, রায়পাশা-করাপুর ও সায়েস্তবাদে কাল ভোট।
৬টি ইউনিয়নে মোট কেন্দ্র ৫৫ টি। নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩১ জন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে লড়বেন ২০৮ জন এবং সংরক্ষিত সদস্যের জন্য ৭১ জন। ৬ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৯৭ জন। তিনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।তবে নির্বাচন কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না ভোটারেরা। সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদে নৌকা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। সেখানে গতকাল বিকেলে পাল্টাপাল্টি জনসভা করে দুই পক্ষ।আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের রুবেল হোসেন মামুন তালুকদার অভিযোগ করেন, চরআইচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ দখল করে কর্মসূচি করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রবেশ করতে পারেনি। তিনি ভোটারদের ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেছেন। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন।’তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করেই দুপুর তিনটায় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দূর-দুরান্ত থেকে কর্মীরা আসবেন তাদের জন্য খিচুড়ির আয়োজন করা হয়েছে।’সায়েস্তাবাদ ইউপি ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত জানিয়েছেন, স্কুল মাঠ দখল করে কোনো ভূরিভোজ কিংবা সভা-সমাবেশ আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল।
খতিয়ে দেখবেন।রাজনীতিতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের অবস্থান দুই মেরুতে। এ নিয়ম পাল্টে গেছে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইতে। সেখানে প্রতিদিন মাইকে প্রচার হয়েছে ‘সালাম রাঢ়ীর সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’। আব্দুস সালাম রাঢ়ী হলেন, চরমোনাই ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। এখানে নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ জিয়াউল করীম।রোববার রাতে চরমোনাই ইউপির বুখাইনগর বাজারের নির্বাচনী কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে দাবি করেছেন সেখানকার নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলাম।চরমোনাই ইউনিয়নের ১ নম্বর নলচরে হাতপাখার কর্মী মিন্টু হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম কো হয়েছে। পোস্টার ছিঁড়তে বাধা দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গত রোববার দুপুরে রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামানসহ তার নেতা–কর্মীদের ওপর বৌসেরহাট এলাকায় হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ৭ জন আহত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবুসহ তার লোকেরা এই হামলা চালায়। এদিকে ওই রাতে ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়াপুর গ্রামের কারিকরবাড়ী এলাকায় তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নৌকার প্রার্থী আহমেদ শাহরিয়ার বাবু।এসব ঘটনার বিপরীতে ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান। গত সোমবার বিকেলে তিনি রায়াপাশা-করাপুর ইউনিয়নের ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে এ কথা বলেন। পুলিশ কমিশনার ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ আপনাদের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেব।