বরিশালে শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বিসিকের সাফল্য

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রশিক্ষণ

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  04:05 AM, 09 November 2021

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনায় কর্মহীন হয়ে পরা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বরিশাল বিসিক।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল বিসিক ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৬৪ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্ভী করে তুলতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বরিশাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বেকার ও কর্মহীন যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিসিকের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। ইতোমধ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।সূত্রমতে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৩১ জন যুবক-যুবতীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যারমধ্যে কম্পিউটার অফিস প্যাকেজ ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪১ জন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ২০ জন, ফুড প্রসেসিং ৩০ জন এবং কার্টি ও সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪০ জন। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে কম্পিউটার অফিস প্যাকেজ ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৪৫ জন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ৪৩ জন, ফুড প্রসেসিং ৮৪ জন এবং কার্টি ও সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৮০ জন।

এছাড়াও শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে গত দুই অর্থবছরে ৩৮১ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছয়টি ব্যাচে ১৮৮ জন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯৩ জন নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিসিক থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ইতোমধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন অনেকেই।ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ইব্রাহিম মাসুম বলেন, করোনায় তিনি বেকার হয়ে হতাশায় ভুগছিলেন। পরবর্তীতে বরিশাল বিসিক থেকে উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে তিনি ইউনিক কুটির শিল্প নামের একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ইতোমধ্যে এ কাজে তিনি অনেকটা সাড়া পেয়েছেন। তবে তার মতো এ ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের শহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

নগরীর জিয়া সড়ক একতা স্মরণীর বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী গাজী মেহেরিন জুঁই বরিশাল বিসিক থেকে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এরপর সেখান থেকে চার শতাংশ লভ্যাংশে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্লক-বাটিক, হ্যান্ড প্রিন্ট ও নকশিকাঁথার একটি কারখানা চালু করেছেন। জুঁই বলেন, কোনো চাকরিজীবী না হয়ে নিজেকে একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং আরো দশজনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্যই তিনি এটা বেঁছে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তার কারখানায় ছয়জন নারী কর্মী কাজ করছেন।শিল্পোদ্যোক্তা নগরীর হাটখোলা মসজিদ রোড এলাকার বাসিন্দা মাহাদী হাসান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে প্রথমে চাকরি করলেও ২০১৯ সালে তিনি নিজে একটি ওয়াশিং ফ্যাক্টরি চালু করেছেন। বরিশাল বিসিক থেকে শিল্পোদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সেখান থেকে তিনি দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বরিশালে প্রথম শ্রেণির একটি ওয়াশিং কারখানা চালু করেন। বর্তমানে একজন নারী কর্মীসহ তিনজন তার কারখানায় কাজ করছেন।নগরীর পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা নারী উদ্যোক্তা শামীমা নাসরিন পুতুল জানান, তার স্বামী একটি জুতার দোকানে স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন।

তবে করোনাকালীন স্বামীর বেতনের টাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পরে। এজন্য তিনি বেসরকারী একটি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পোশাকের দোকান দিয়েছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বরিশাল বিসিকের উদ্যোগে ‘উদ্যোক্তা পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে দেখা গেছে-বরিশাল বিসিক থেকে বিভিন্ন ট্রেড এবং শিল্পোদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করেছেন। ওই গ্রুপে দেওয়া তথ্যমতে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তারা একটি পরিবারের মতো একে অন্যের সাথে ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করে ব্যবসাকে আরো গতিশীল করতে পারছেন।বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক আধুনিক ব্যবসা উন্নয়ন, সেবাসমূহ প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আরও উন্নত সেবা প্রদান, নতুন শিল্পোদ্যোগকে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে বরিশাল বিসিক। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্ভী করে তুলতে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বরিশাল বিসিককে ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা ইতোমধ্যে ৩৮ জন উদ্যোক্তার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তারা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার আয়োজন এবং অনলাইন মার্কেটিংয়ের জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। এ গ্রুপটি মূলত বরিশাল বিভাগের ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী কিংবা বিক্রয়ের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম।বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, গত ২১ অক্টোবর বিসিকের নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে নারী উদ্যোক্তাদের বিজনেস প্লানের প্রেজেন্টেশন দেখে সত্যি আমি অভিভূত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, নিঃসন্দেহে আমি বিশ্বাস করছি, প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী চিন্তায় খুব শীঘ্রই বিসিকের মাধ্যমে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বেকার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক-যুবতীদের ঋণ সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে বিসিক ও কর্মসংস্থান ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা স্মারকের আওতায় কর্মোদ্যোগ হিসেবে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের (১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়স) ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন :