পরিবহন ধর্মঘটে অবরুদ্ধ বাংলাদেশ
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ

অনলাইন ডেস্কঃগত বুধবার (৩ নভেম্বর) ডিজেল ও করোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করেছে সরকার। দিবাগত রাত ১২টা থেকেই এই দাম বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়। তার পরের দিনই ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। (শুক্রবার) সারা দেশে পরিবহণ ধর্মঘটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কর্মস্থল, হাসপাতাল, পরীক্ষা কিংবা জরুরি কাজের উদ্দেশে রাস্তায় বের হয়ে গণপরিবহণ না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। মোটকথা পরিবহণের হাতে সারা দেশে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।পরিবহণের এই ধর্মঘটে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।
এভাবে হুটহাট বাস বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। সমস্যা হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। এভাবে সাধারণ মানুষদের জিম্মি কেন করা হচ্ছে?ডিজেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে সাভারে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘটে’ আটকে পড়ার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। তাদের হঠাৎ এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেন রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা। এরপর একে একে এই বিক্ষোভে একাত্মতা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।এদিকে সকাল থেকেই কাজে যাওয়ার উদ্দেশে বের হওয়া সাধারণ মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে। রাস্তায় কোনো বাস নেই। আছে শুধু রিকশা, সিএনজি ও রাইড শেয়ারিং। কিন্তু এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ১০০ টাকার ভাড়ায় যেখানে যাওয়া যায়, সেখানের ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ২৫০, ৩০০।
এমনকি কোনো কোনো চালক ৫০০ টাকাও চাচ্ছেন। উপায় না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন এই অসহনীয় ভাড়াতেই গন্তব্যে যেতে।বাস না পেয়ে বহু মানুষ হেঁটে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন।ক্ষোভে অনেকেই ধিক্কার জানাচ্ছেন সরকারের এই সিদ্ধান্তে। পাশাপাশি ক্ষোভ ঝারছেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ওপরও। তারা বলছেন, হঠাৎ জ্বালানির দাম না বাড়িয়ে সুন্দরভাবে সমন্বয় করা দরকার ছিল সরকারের। তা না করে হঠাৎ ডিজেল-করোসিনের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এতে আমাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হলো। পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তিও।এদিকে সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে বরিশালের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে ডিজেল ও গ্যাস চালিত তিন চাকার যান (থ্রি হুইলার)। তবে শহরের কিছু কিছু স্থানে থ্রি হুইলার চলাচল করতে দেখা গেছে।সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের সামনের সড়কসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে থ্রি হুইলার, বিশেষ করে এলপিজি পরিচালিত সিএনজি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাত্রীদের সে সব যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মালিক ও শ্রমিক নেতাকর্মীদের নির্দেশে এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
চালকরা জানান, ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধির পাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই ভাড়া বৃদ্ধি না করলে গাড়ি চালানো যাবে না।মালিক সমিতির নেতারা জানান, সরকার হয় তেলের দাম আগের অবস্থায় নিয়ে যাক, অথবা ভাড়া বৃদ্ধি করে দিক।সড়কে অবরোধ থাকলেও লঞ্চ চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।কালাম নামে এক যাত্রী জানান, বরিশাল থেকে মেহেন্দিগঞ্জের ভাড়া ৭০ টাকা, সেখানে আজ তাকে দিতে হয়েছে ১শ’ টাকা। এভাবে বরিশাল থেকে ঢাকা, ভোলাসহ অন্যান্য নৌরুটের ভাড়াও বেশি নেওয়া হচ্ছে।এবিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় প্রতিটি লঞ্চে জ্বলানি বাবদ ৫০ থেকে এক লাখ টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছ। তবে এখনও যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে কম।বরিশাল ঢাকা নৌরুটে ডেকে যাত্রী প্রতি সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৭০ টাকা। লঞ্চ মালিকরা কিন্তু সে ভাড়া নিচ্ছে না। কেবিন ও সোফার ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় লঞ্চের ভাড়া দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়েছে মালিক সমিতি। মালিকদের লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।গতকাল শুক্রবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবের চিঠি পাঠানো হয়।অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার মাহবুব উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্থার পক্ষ হতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও আপনার দপ্তরে বহুবার আবেদন করা হলেও ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আগামী ৮ নভেম্বর ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি একটি সভা আহ্বান করেন। কিন্তু গত ৩ নভেম্বর সরকার হঠাৎ করে জ্বালানি তেল তথা ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন এবং ওই দিন রাত ১২টা থেকে কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া হয়।‘এই পরিস্থিতিতে জাহাজ পরিচালনা ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যায়। সংগত কারণে সারাদেশে লঞ্চ মালিকরা যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য সংস্থাকে অনুরোধ করেন।
অন্যথায় জাহাজ পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করেন।এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে চলমান ধর্মঘট আগামী রোববার (৭ নভেম্বর) পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে বলে জানিছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব সেভাবে আসেনি। রোববার মিটিং হবে এবং সে পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।