পায়রা নদী তীব্র ভাঙনে হুমকির মুখে আমতলী

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:09 PM, 31 October 2021

অনলাইন ডেস্কঃ পায়রা নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধিতে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে বরগুনার আমতলী পৌর শহর। গত ২৩ বছরেও সংস্কার হয়নি শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা।দ্রুত সংস্কার করা না হলে বিলীন হয়ে যেতে পারে পাউবো অফিস, খাদ্যগুদাম, মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ সহস্রাধিক বাড়িঘর।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে আমতলী পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় ফেরিঘাট এলাকা থেকে পাউবোর অফিস পর্যন্ত ১২০০ মিটার শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অধীনে সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়। ওই সময় নিম্নমানের কাজ করায় অল্পদিনের মধ্যেই ব্লক সরে যেতে থাকে।ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন ও রোয়ানু, বুলবুল ও আম্পানের প্রভাবে আমতলী পৌর শহর সংলগ্ন পায়রা নদীর সিসি ব্লক সরে ও ভেঙে যাচ্ছে। এতে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, কাঠপট্টি, পুরাতন লঞ্চঘাট, শ্মশানঘাট ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ সহস্রাধিক বাড়িঘর নদী বক্ষে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৪ সালে সিডর প্রকল্পের আওতায় আমতলী পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় ১২০০ মিটার ব্লক মেরামতের কাজ অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইএল ১১৫ মিটার পায়রা নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক সংস্কার করে অবশিষ্ট কাজ ফেলে রেখে চলে যায়। এতে আরও হুমকির মুখে পড়ে পৌর শহর।গত ২৩ বছরে সংস্কার না করায় পায়রার ভাঙনে অধিকাংশ ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এতে বিলীন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। পায়রা নদীর ভাঙন থেকে আমতলী পৌরশহরকে রক্ষায় দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।রোববার পায়রা নদী সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পায়রা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এতে ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে এবং দুর্বল অনেক ব্লক ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমতলী স্লুইসগেট এলাকায় দুই পাশের ব্লক সরে গেছে।ব্লক সরে যাওয়ায় পায়রা নদী এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ায় আগের মত তেমন পর্যটকরা বেড়াতে আসেন না।নারী পর্যটক মোসা. শাফিয়া বেগম বলেন, বিকালে বিনোদনের জন্য পায়রা নদীর ব্লকে বেড়াতে যেতাম। কিন্তু সেই অবস্থা এখন আর নেই। ব্লক সরে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত ব্লক নির্মাণ করা হলে ফের পদচারণায় মুখরিত হবে পায়রা নদী সংলগ্ন আমতলীর পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা।শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী শিপন মিস্ত্রি বলেন, পূর্ব থেকেই নদী ভেঙে ব্লক সরে যেত। সিডরের প্রভাবে ব্লক সরে গিয়ে নদী ভাঙনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাদ্যগুদাম ঘাটসহ এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।লঞ্চঘাট এলাকার শহীদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ব্লক সরে পায়রা নদীতে বিলীন হওয়ায় লঞ্চঘাট, পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ পৌর শহর হুমকির মুখে পরেছে। অতিদ্রুত ব্লক সংস্কার করা না হলে তীর ভেঙে বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। দ্রুত পায়রা নদীতে ব্লক দিয়ে সংস্কারের দাবি জানাই।আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, পায়রা নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই পৌরশহরের আয়তন ছোট হচ্ছে। ভাঙনে বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। পুরাতন সিসি ব্লক সরে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা না হলে ভাঙনের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাবে।তিনি আরও বলেন, এ শহরকে রক্ষায় তিন কিলোমিটার পায়রা নদীর তীরে সিসি ব্লক নির্মাণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দ্রুত সিসি ব্লক নির্মাণের দাবি জানান তিনি।বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান সুজন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের প্রজেক্টে আমতলী পৌর শহর রক্ষায় পায়রা নদীর ব্লক সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছি।পাউবোর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার আলম বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমতলী পৌর শহরের শহর রক্ষা বাঁধসহ নদী ভাঙন রোধে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বাজেট পাওয়া গেলে কার্যক্রম শুরু করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :