দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ২৮টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জন্য আশির্বাদ হলেও কোন কোন শিক্ষকদের কপাল পুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে কর্মকর্তা দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মিলছে না প্রতিকার।
আর এ সুযোগে অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দেশরত্ব শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের।অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেহেন্দিগঞ্জের গাগরিয়া এলাকায় ২০১৪ সালে দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ২০ মে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ১৯ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি (আবশ্যক, পিসি-২৬৯৯/১৫) প্রকাশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তরা কলেজে যোগদান করে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও কেউই বেতন-ভাতা পাননি।
তবে ২০২০ কলেজটি সরকারিকরণ করার পর অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ার হোসেন। সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত আবশ্যক বিজ্ঞপ্তিটি জাল করে নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি (নতুন পদ সৃষ্টি করে) নিজেই সত্যায়িত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিল করেন। এরপর তিনি মাউশি’র প্রতিনিধি তৎকালীন সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ অলিউল ইসলামের কাছে গিয়ে অবৈধ নিয়োগের জন্য প্রস্তাব দেন। প্রফেসর অলিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ার হোসেন তার কাছে অনৈতিকভাবে নিয়োগ সিটে স্বাক্ষর নেয়ার জন্য এলেও তিনি তাতে স্বাক্ষর করেননি।
তিনি আরো বলেন, কোন ধরণের অবৈধ কাজের সাথে তিনি কখনোই আপোষ করবেন না।অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে, মাউশি ও সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিলকৃত কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্যে দেখা গেছে অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনের নামের পাশে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন তথ্য নেই।কলেজটি সরকারিকরণ করার পরই অধ্যক্ষ অলিউল ইসলামসহ বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে প্রথমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮জনকে বাদ দিয়ে নতুন করে ৮জন নিয়োগ দেন। যাদের মধ্যে কেউই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। এ নিয়ে একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও থেমে নেই অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন। এ ঘটনায় প্রকৃত নিয়োগপ্রাপ্তরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে এর প্রতিকার চেয়ে মাউশি মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দাখিল করেন অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শহিদুল ইসলাম আলামিন। এ বিষয়ে আলামিন মুঠোফোনে জানান, তাকে নিয়োগপত্রও দেয়ার কয়েকদিন পরেই তার কাছ থেকে তা ফেরত নেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন।
সম্প্রতি অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন তাকে বলেছেন অব্যাহতিপত্র দেয়ার জন্য। এমনকি তাকে যে কোন সময় গেস্খফতার করাতে পারেন বলেও হুমকি দেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন।কলেজের রসায়ন বিষয়ে প্রভাষক শামীমা মুকুল জানান, “বৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত আমরা সকলেই একে অপরকে চিনতে পারলেও সরকারিকরণ করার পর কলেজে গিয়ে অনেক অপরিচিত মুখ দেখতে পেয়েছি, যারা নিয়োগ পরীক্ষায়-ই অংশগ্রহণ করেননি। এবিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, কলেজের সভাপতি এমপি পঙ্কজ দেবনাথের স্বাক্ষর না থাকলে নিয়োগ হয় কিভাবে? শিক্ষকদের তাহলে আপনি নিয়োগপত্র কিভাবে দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কেউ আমার স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগপত্র তৈরী করেছে কিনা তা জানা নেই।
”এ বিষয়ে জানতে মাউশি’র উপপরিচালক (কলেজ-১) মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান মুঠোফোনে অফিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজী হননি। এ বিষয়ে তিনি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোঃ শাহেদুল খবির চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে প্রফেসর মোঃ শাহেদুল খবির চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এছাড়া তাকে একটি ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুকের ব্যবহৃত মুঠোফোনে (নাম্বার ০১৮৫৪ —- ৮৬) একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।