বিষখালীর চরে অবৈধ ইটভাটার নেপথ্যে সাবেক মেয়র!

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:26 AM, 11 October 2021

পাথরঘাটা প্রতিনিধিঃ বিষখালী নদীর চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিয়ে তা ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদীতে অবৈধ বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উঠিয়ে ভরাট করা হচ্ছে চরের গর্ত হওয়া জমি।শুধু তাই নয়, সরকারি জমির পাশাপাশি কৃষি জমি জোর করে দখল করে নিয়ে এসব ইটভাটা নির্মাণ করায় কমে আসছে ফসলের উৎপাদন।বিষখালী নদীর মোহনার চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহারের কারণে ব্যহত হচ্ছে লঞ্চ চলাচল।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, মোহনা থেকে মাটি কাটা ও বালু তোলায় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে নদীর গতিপথ। শিগগিরই শুরু হবে নদী ভাঙন।বিষখালী নদী পাড়ের বাইনচোটকি এলাকাবাসী জানান, মোহনার চর দখল করে দুটি ইটভাটা নির্মাণ করেছেন ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিসলু ও বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহাদাত হোসেন।এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর বাইনচোটকি এলাকা থেকে আগস্টের শুরুর দিকে প্রথমেই এস্কাভেটর দিয়ে মাটিকাটা শুরু করে মো. কিসলুর মালিকানাধীন আর এস বি ব্রিকস- ১ ও আর এস বি ব্রিকস-২। কোনো বাঁধা না পেয়ে নদী চরের অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকা থেকে মাটি কেটে প্রস্তুত করেছেন ইট তৈরির জন্য।

পাশাপাশি নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উঠিয়ে চরের কিছু কিছু জায়গা ভরাট করেন তারা।একইভাবে নদীর চর দখল করে মাটি কাটা শুরু করেন বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন আল মামুন ব্রিকস।নদী পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটি কেটে নিচ্ছে ইটভাটার মালিকরা। তারা সবাই প্রভাবশালী, তাই কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। একই এলাকার রহমান, মালেক,সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মিয়া, আবু তাহেরসহ একাধীক বাসিন্দা বলেন, এভাবে নদীর চর কাটতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে স্থানীয় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পরিবারগুলো।এদিকে বরগুনা-ঢাকা নৌ রুটের এম ভি ফারহান লঞ্চের চালক মো. সোহেল বলেন চরের মাটি কেটে নেওয়ায় বিষখালী নদী মোহনায় বেড়েছে স্রোত, তাই লঞ্চ চলাচলে বেড়েছে ঝুঁকি।পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু বলেন, বেড়িবাঁধের পাশ থেকে ইট ভাটায় মাটি কেটে নেওয়ায় যমুনার পাড়ের মতো তীব্র ভাঙনের মুখে পড়বে পুরো কাকচিড়া ইউনিয়ন।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় কমেছে এলাকার ফসল উৎপাদন। কেউ কেউ বলছেন, ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করতে গেলেই হেনস্থার শিকার হতে হয় তাদের।পরিবেশ আইনবীদ সমিতির (বেলা) সদস্য মিজানুর রহমান জানান, নদীর মোহনা থেকে বালু উত্তোলন ও চর থেকে মাটি কাটার কারণে নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। একটু লাভের আশায় এরা দেশের ক্ষতি করছে। নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়ে গেলে ভয়াবহ ভাঙন হবে। সেই ভাঙনে হাজারও বসতঘর বিলীন হয়ে যাবে নদীতে। গত সপ্তাহে বেলার পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তারা। ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মাদ আল-মুজাহিদ বলেন, কোনোভাবেই নদী তীরের মাটি কাটা যাবে না। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সাবেক মেয়র শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মত আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমি দীর্ঘদিন চরাঞ্চলে ইটভাটা চালাই, তবে বাহির থেকে মাটি কিনি না। আমার নিজের কেনা সম্পত্তির মাটি দিয়ে ইট তৈরি করি। আমার দুটি ইটভাটায় জমি আছে ৩০ একর।

আপনার মতামত লিখুন :