ঘুষের বিনিময়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন পুরুষ!

বরগুনা মহিলা অধিদপ্তর

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  01:23 AM, 11 October 2021

বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনায় মাতৃত্বকালীন ভাতা সহায়তা তহবিল কর্মসূচিতে (ল্যাকটেটিং মাদার) উৎকোচ বাণিজ্য ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে বয়স্ক, স্বামী-শিশুহীন নারী এমনকি পুরুষও পাচ্ছেন মাতৃত্বকালীন ভাতা। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক নারী।জেলা মহিলা অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে কর্মসূচির আওতায় শিশুর জন্ম থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাকে ২৮ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। ২০-৩৫ বয়সী দুগ্ধদায়ী মায়েরা এ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরগুনা পৌর শহরে ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক হাজার ৫০ জন।তবে অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ঘুসের বিনিময়ে কর্মসূচিতে সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেখানে বয়স্ক, স্বামী-শিশু নেই এমন নারী এমনকি পুরুষও এ সুবিধা নিচ্ছেন।সুবিধাভোগী একাধিক নারী জানান, বরগুনা মহিলা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল ইসলাম ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মেহেরুন নাহার মুন্নির যোগসাজশে উৎকোচের বিনিময়ে এমন অনৈতিক কাজ চলছে।ল্যাকটেনিং মাদার কর্মসূচির ভাতা পাচ্ছেন আনিসা আক্তার নামের এক নারী।

তার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নাম নেই, তবে, বাবার নাম ওয়াহেদুল ইসলাম, ঠিকানা মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন সড়ক আমতলী পৌরসভা লেখা রয়েছে। ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনিসা আক্তার বরিশালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সেখানেই তিনি বসবাস করেন।একইভাবে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলি এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণা সরকারের শিশু নেই। অথচ, তিনি কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। শুধু নারীই নয়, ঘুসের বিনিময়ে একজন পুরুষও পাচ্ছেন এ ভাতা।আল-আমিন চৌকিদার বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ছোট পোটকাখালী এলাকার বাসিন্দা। তিনিও দুগ্ধদায়ী মাতা হিসেবে ভাতা পেয়ে আসছেন। তালিকায় নামের জায়গা খালি থাকলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি রয়েছে। তার স্ত্রীর সুখি বেগমও রয়েছেন এ তালিকায়। আল-আমিন ও সুখি জানান, দুজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে অফিস সহকারী নাজমুল ইসলামকে ছয় হাজার টাকা দিয়েছেন।পৌর শহরের কলেজ ব্রাঞ্চ সড়কের বিলকিস বিনা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৫৩ বছর।

তার কনিষ্ঠ সন্তান এখন লেখাপড়া করছে দশম শ্রেণিতে। তিনিও ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের অধীনে সহায়তা পাচ্ছেন উৎকোচের বিনিময়ে। তিনিও ছয় হাজার টাকা দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।এ ধরনের অর্ধশতাধিক নারীর তথ্য-উপাত্ত জাগো নিউজের হাতে এসেছে। যারা ঘুস দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগের বাড়ি বরগুনা পৌরসভায়। যে কারণে এ নারীদের কেউই সহায়তার আওতায় আসার কথা না। কিন্তু উৎকোচের বিনিময়ে তারা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।বরগুনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘুস নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে শালিস বৈঠকের ভিডিও দেখালে তিনি চুপ হয়ে যান। পরে এ প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন।এ বিষয়ে বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, এ কর্মসূচির সুবিধাভোগী বাছাই ও সহায়তার টাকা দেওয়ার সব কাজই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর করে থাকে।

আমাদের তারা অবহিতও করে না। এমন অনিয়মের বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।বরগুনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নি দাবি করেন, নীতিমালা মেনেই সুবিধাভোগী বাছাই ও ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ঘুস নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।অফিস সহকারীর ঘুস নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার (নাজমুলের) বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন :