বিদ্রোহীরা যতই জনপ্রিয় হোন মনোনয়ন পাবেন না

বিদ্রোহীরা যতই জনপ্রিয় হোন মনোনয়ন পাবেন না
বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- পিআইডি
স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো নির্বাচনে দলের কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনেই আর দলীয় মনোনয়ন পাবেন না তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- বিদ্রোহী প্রার্থীরা যত জনপ্রিয়ই হোন না কেন, তারা আর কখনোই নৌকার প্রার্থী হতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের তিন দিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচন, দুটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও ১০টি পৌরসভার মেয়র এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তিন দিনের এ বৈঠক ডাকা হয়। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় দ্বিতীয় এবং আগামীকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শেষ দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন শেখ হাসিনা।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে দলীয় নেতাদের অনেকেরই ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থিতার আড়ালে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এ সময় অনেক জনপ্রিয় নেতার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জিতে আসার প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দলের আগের সিদ্ধান্ত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কেউ নির্বাচনে জিতে এলেও পরে তারা আর দলের মনোনয়ন পাবেন না। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীই ভবিষ্যতে আর দলের কোনো পদ-পদবিতে আসতে পারবেন না। তবে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে এমন নেতাদের বহিস্কার না করার সিদ্ধান্তের কথাও জানান শেখ হাসিনা।
বৈঠকে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির তাগিদও দিয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে চলমান বিভিন্ন উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারী নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমে এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব সৃষ্টির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আরপিওতেও বিধিবিধান রয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়টিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। মূলত প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের শীর্ষে থাকার কারণেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতাকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার বড় কারণ রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগের নারী নেতৃত্ব কম। বগুড়ায় একজন ছাড়া এ বিভাগে আর কোনো নারী সংসদ সদস্য নেই।
এ ছাড়া গতকাল চূড়ান্ত হওয়া রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আর ১০টি পৌরসভার মেয়র ও দুটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বেলায় যোগ্য ও জনপ্রিয় নারী নেত্রীদের বিশেষভাবে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। একই দিন দুটি উপজেলা ও ১০টি পৌরসভা নির্বাচনেরও ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দলের মনোনয়ন বোর্ডের ধারাবাহিক বৈঠক চলছে গণভবনে। বৈঠকে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা যোগ দিচ্ছেন।