দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ২০০ কেজি স্বর্ণের কোরআন!
দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ২০০ কেজি স্বর্ণের কোরআন!
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ে বাংলাদেশসহ ১৯২টি দেশের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘দুবাই এক্সপো-২০২০’। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার এ মেলা আগামী ছয় মাস চলবে। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এ প্রদর্শনী চালু হয়।
প্রদর্শনীতে থাকবে নানা চমক। ধারণা করা হচ্ছে, প্রদর্শনীটি রেকর্ড করতে যাচ্ছে। বৃহত্তম এ প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ২০০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি বৃহত্তম কোরআনের অংশ বিশেষের প্রদর্শনী।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ পবিত্র কোরআনটি পাকিস্তানে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর প্রতিটি হরফ সাজানো হচ্ছে স্বর্ণ দিয়ে। পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী শহিদ রাসাম কোরআনটি প্রস্তুত করছেন। ফ্রেম ছাড়া সাড়ে আট ফুট দৈর্ঘ্যের এবং সাড়ে ছয় ফুট প্রস্থের এ কোরআন তৈরি করতে ব্যয় হবে ২০০ কেজি স্বর্ণ। ৫৫০ পৃষ্ঠার এ কোরআনে শব্দ রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার। প্রতিটি পৃষ্ঠায় গড়ে ১৫০টি শব্দ থাকবে। এগুলো তৈরি করতে প্রায় ২০০ কেজি স্বর্ণ এবং ২ হাজার কেজি অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হবে। অ্যালুমিনিয়াম নির্মিত শব্দগুলো স্বর্ণ দিয়ে মোড়া থাকবে।
এ বিষয়ে দুবাইয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানি ওই শিল্পী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে কোরআনটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তবে এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ে তিনি এ কোরআনের অংশবিশেষ উপস্থাপন করবেন। লাখ লাখ দর্শকের কাছে সৃজনশীল কাজটি তুলে ধরার জন্য তিনি এটিকে উপযুক্ত ও সঠিক প্লাটফর্ম বলে মনে করছেন।
করাচির আর্টস কাউন্সিল ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসের অধ্যক্ষ শহিদ রাসাম বলেন, আমি এ আয়োজনে পবিত্র কোরআনের হৃদয় হিসেবে পরিচিত সুরা আর রহমানের অংশটুকু প্রদর্শন করব।
প্রতিভাবান এ শিল্পী জানান, এখন পর্যন্ত পবিত্র কোরআন কাগজ, কাপড় ও পশুর চামড়ার প্রচলিত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আমি তাই ভিন্ন কিছু করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছি এবং এখন পর্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আমার এ প্রকল্পে ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি উচ্চমানের ক্যানভাসে অ্যালুমিনিয়াম ও স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে পবিত্র কোরআন লিপিবদ্ধ হচ্ছে।
তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনটির আকার হবে ফ্রেম ছাড়াই সাড়ে ছয় ফুট বাই সাড়ে আট ফুট। বর্তমানে আমার ছাত্রসহ প্রায় ২০০ প্রতিভাবান শিল্পী এ প্রকল্পে কাজ করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শহিদ রাসাম বলেন, আইকনিক প্রকল্পটি নিজে শুরু করলে বন্ধুরা এ প্রকল্পে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। আসলে এটি একটি বিশেষ ধরনের প্রকল্প এবং সমাজের সব অংশের ব্যাপক সমর্থন ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।
দুবাই এক্সপোতে কোরআনটি কোথায় প্রদর্শিত হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে একজন পাকিস্তানি হিসেবে অবশ্যই আমি চাই, এটি পাকিস্তানি প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হোক। তবে আরও কিছু অংশগ্রহণকারী দেশ এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই বিষয়টি এখনও ঠিক হয়নি।
দুবাই এক্সপো-২০২০ গত বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে চলতি বছরের ১ অক্টোবরে শুরু হলো। ২০২২ সালে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনী চলবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ প্রদর্শনীতে ১৯২টি দেশ অংশ নেবে। ছয় মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীতে দেশগুলো নিজেদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পণ্য, উদ্ভাবন, জাতীয় ব্র্যান্ড, পর্যটন ও নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি তুলে ধরবে।
ইতিহাসে এবারই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে আমিরাত সংযুক্ত ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ এর আয়োজন করছে।
এর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড এক্সপো ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।