স্মৃতির পাতায় মাইনুল হাসান

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  11:51 AM, 02 October 2021

শাকিল মাহমুদ বাচ্চু ॥ দখিনের সাংবাদিকতার প্রান পুরুষ মাইনুল হাসান। শ্রদ্ধেয় মাইনুল হাসান নেই আজ ১৭টি বছর। আজ ২রা অক্টোবর। তার ১৭ তম মৃত্যুবাষিকী। কিন্তু তার দেখিয়ে যাওয়া নীতি ও আদর্শ থাকবে সারাটা জীবন। তার মৃত্যুতে বরিশাল তথা দখিনের মফস্বল সাংবাদিকরা একজন অভিভাবক হারিয়ে এখনও শুন্যতায় ভুগছেন। বরিশাল সাংবাদিকতার বাতিঘর মাইনুল হাসান ইত্তেফাক পত্রিকার বরিশাল অফিসের স্টাফ রিপোটার হিসাবে কর্মরত থাকলেও বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলার কর্মরত সাংবাদকর্মীদের একজন বটবৃক্ষ হিসাবে ছায়া দিয়েছেন তার মূত্যু’র আগের দিন পর্যন্ত। সে কারনে দখিনের সাংবাদিকরা তার নীতি ও আর্দশ বুকে ধারন করে সাংবাদিকতা করতে চায়। আমার চোখে দেখা সাংবাদিকতায় সর্বকালের সেরা ব্যক্তিটি হলেন প্রয়াত মাইনুল হাসান। একজন সংবাদকর্মী বিপদে পড়লে (হামলা- মামলা) শিকার হলে তিনি পাশে দাড়িয়ে সংবাদকর্মীকে উদ্ধার করতেন। তিনি ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। রাঘব বোয়ালদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে কি ভাবে সাংবাদিকতা করতে হয় তা তিনি দেখিয়ে গেছেন। তার ভালবাসায় ¯িœগ্ধ হয়েছেন বরিশাল বিভাগের শতশত সংবাদকর্মীরা। বিশেষ করে আমিও মাইনুল হাসানের ¯েœহ ভালবাসা পেয়েছি। যখনই হামলা মামলার শিকার হয়েছি, তিনি পাশে দাড়িয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। ভারত থেকে কিডনি রোগের চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে মাইনুল ভাই অসুস্থ অবস্থায় পায়ে হেটে আমাকে নিয়ে আমার একটি মামলার বিষয় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা’র কাছে গিয়ে বলেছেন আমার (বাচ্চু) নিরাপরাধ তাকে যেন অহেতুক হয়রানী না করা হয়। আমি যখন উজিরপুরে সাংবাদিকতা শুরু করি। সে সময়টা ছিলো সাংবাদিকতার চরম দু:সময়। ৯০ দশকের কথা একদিকে তথ্য প্রযুক্তি’র সমস্যা অন্যদিকে উজিরপুর ছিলো সর্বহারাদের অধিপত্য। তখন মাইনুল ভাই আমাকে সাহস যুগিয়েছেন। টেলিফোনে তাকে নিউজ দিতাম। পরদিন পত্রিকায় নিউজ ছাপা হওয়ার পর ফোন দিয়ে মাইনুল হাসান বলতো তোমার সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার ভালবাসায় আমার সাংবাদিকতার পথচলা শুরু হয়। সংবাদ সংক্রান্ত কাজে মাইনুল হাসান উজিরপুরে একাধিক বার পা দিয়েছেন। তার সাথে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহের মজাই ছিলো আলাদা। মাইনুল হাসান হাসি ঠাট্টা করে জুনিয়র সহকর্মীদের সাথে অল্পতেই নিজেকে বিলীন করে দিতেন। তার সাথে একাধিকবার নিউজ সংক্রান্ত কাজে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দূর্বৃত্তদের গুলিতে জল্লার ইউপি চেয়ারম্যান অবনী বাড়ৈ নিহত হবার পর উজিরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চল কুড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে আমি ছবি তুলেছি। একদিন হঠাৎ মাইনুল হাসান, শওকত মিল্টন, পুলক চ্যটার্জী, আকতার ফারুক শাহিন, গোপাল সরকার ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের সাথে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে ফেরার পথে মাইনুল হাসান বললেন, বাচ্চু তুমি কি ভাবে যাবে ? আমাদের গাড়ীতে উঠো। আমি একত্রে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে গাড়ীতে উঠতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তখন মাইনুল হাসান ধমক দিয়ে বললেন কি ভয় পাও, তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উঠো। গাড়ীতে ওঠার পর আস্তে আস্তে গাড়ী’র চাকা ঘুরতেই মাইনুল ভাই’র হাসি ঠাট্টায় সাথে শওকত মিল্টনের দিকনির্দেশনা মুলক কথায় মাইক্রোবাসের মধ্যে পরিবেশ এক আড্ডা ঘরে রুপান্তরিত হয়। ধামুরা বাজারে একটি ভাতের হোটেলে দুপুরের খাবার শেষে সকল সংবাদকর্মীদের খাবার বিলটা মাইনুল হাসান পরিশোধ করে বলেন, তোমরা আমার সন্তানের মতো আমি থাকতে তোমরা বিল দিবা এটা কেমন কথা। সর্বশেষ একটি নিউজের তথ্য সংগ্রহে’র কাজে মাইনুল হাসান উজিরপুরের ওটরায় এসে ওসি’র বক্তব্য নিতে থানায় যাওয়ার পথে মটর বাইক নিয়ে থানা কম্পাউন্ডে পরে গিয়ে আহতও হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার সাথে আমি ছিলাম। নানা সময়ের স্মৃতি রয়েছে তার সাথে। তাকে নিয়ে আমার নানা স্মৃতিচারন করতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না। সাংবাদিকতার বাতিঘর মাইনুল হাসানের আর্দশ নিয়ে পথ চলতে পারলে একজন পথিকৃত সংবাদকর্মী হওয়া সম্ভব। একজন মাইনুল হাসান সংবাদকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন স্বচ্ছ সাংবাদিকতার। মফস্বলে বিনা বেতনে সাংবাদিকতা করা সংবাদকর্মীদের সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য পেশায় মনোযোগী হতে উৎসাহিত করতেন। আজ ১৭টি বছর হতে চলছে মাইনুল হাসান নেই। কিন্তু তার আর্দশ নিয়ে পথ চলছে দখিনের জনপথের শতশত সংবাদকর্মী ।

আপনার মতামত লিখুন :