নদীমাত্রিক অঞ্চল বরিশাল। কীর্তনখোলা, মেঘনা, কারখানা, বিঘাই, পায়রা, সন্ধ্যা এবং আড়িয়াল খাঁ সহ বেশ কিছু নদী

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  12:11 AM, 30 September 2021

ঘিরে নদীমাত্রিক অঞ্চল বরিশাল। কীর্তনখোলা, মেঘনা, কারখানা, বিঘাই, পায়রা, সন্ধ্যা এবং আড়িয়াল খাঁ সহ বেশ কিছু নদী এ জেলাকে। ফলে বর্ষা মৌসুম কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই আতঙ্কে থাকতে হয় নদীর তীরবর্তী মানুষগুলোকে।
কেননা নদীগুলোর তীব্র ভাঙন ঘিলে খাচ্ছে গোট বরিশাল জেলাকে। এরি মধ্যে ভায়াবহ ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। বিলিন হয়েছে স্থাপনা, ফসলি জমি এবং বসতভিটা।

তবে বছরের পর বছর নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকলেও প্রতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন প্রতিরোধে শুধুমাত্র প্রকল্পতেই আটকে আছেন তারা। তিন-চার বছর পূর্বে নেয়া প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলো এখনো পৌঁছায়নি মন্ত্রণালয়ে। এমনকি কবে নাগাদ প্রকল্পগুলো ভাঙন রোধে বাস্তবে রূপ নিবে তাও সুস্পষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ।

যদিও প্রকল্পগুলো অনুমোদনে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নিজেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন এবং প্রকল্প বাস্তায়ণ হলে এ অঞ্চলে নদ-নদীর চিত্র পাল্টে যাবে বলে আশাবাদী বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরেই কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, কালাবদর. বিঘাই, মেঘনা এবং সুগন্ধা ও সন্ধ্যা নদীর তীর ভাঙছে। বিশেষ করে চলতি বর্ষা মৌসুমে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া, আর আবদানী, চরমোনাই এবং চরকাউয়া এলাকায় নদী ভাঙন নতুন করে শুরু হয়েছে।
এছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলার ছোট মিরগঞ্জ বাজার এলাকায় নদীর ভাঙন দীর্ঘ দিন ধরে লেগেই আছে। উপজেলার মহিষাদি এবং বাহেরচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি বসতঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বাহেরচর হাসপাতালে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিও বিলিন হয়েছে নদীতে। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মেঘনা নদীর ভাঙনে দিশেহারা ওই অঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘এসব নদী’র ভাঙন ঠেকাতে প্রায় তিন থেকে চার বছর পূর্বে পৃথক পাঁচটি প্রকল্প গ্রহণ করে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার সর্বমোট প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে রয়েছে ব্লক বাধ এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী শাসন। প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও একটি প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেননি।

এদিকে, বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক শামীম পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে স্বস্থির নি.স্বাশ ফেলেন এই অঞ্চলের ভাঙন কুলের মানুষেরা। অন্তত তার প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে নদী ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা হবে বলে আশা ছিল তাদের। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছর হয়ে গেছে। অথচ এই অঞ্চলের নদী ভাঙন রোধে তিনিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কীর্তনখোলা, তালতলী, আড়িয়াল খাঁ, কালাবদর ও বিঘাই নদীর ভাঙনর ভাঙন থেকে সদর উপজেলার চরমোনাই দরবার, লামছড়ি, কামারপাড়া, রামের কাঠি, হবি নগর, আট হাজার, ইছাগুড়া, কালিগঞ্জ, সিংহেরকাঠি এলাকা রক্ষায় প্রায় ১৩ কিলোমিটার ব্লক দিয়ে নদী শাসন প্রকল্প। যার প্রকল্প মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৯শত কোটি টাকা।

এছাড়া সুগন্ধা, সন্ধ্যা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার বিমানবন্দর, আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ, কেদারপুর, মীরগঞ্জ, সাধুকাঠি, শিকারপুর, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন, রহমাজনকাঠী এবং ভাঙার মোড় রক্ষায় ১১ কিলোমিটার ব্লাক বাধ এবং এয়ারপোর্ট, মীরগঞ্জ ও আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন নদীতে ৬ কিলোমিটার ড্রেজিং প্রকল্প রয়েছে। যার ব্যায় নির্ধারণ হয়েছে ১১ কোটি টাকা।

তৃতীয় প্রকল্পটি হচ্ছে, কারখানা, বিঘাই ও পায়রা নদীর ভাঙন হতে শেখ হাসিনা সেনানিবাস রক্ষা প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে আট কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ করা হবে ব্লক বাধ দিয়ে। সেই সাথে করা হবে এক কিলোমিটার ড্রেজিং। এ প্রকল্পটির ব্যায় নির্ধারণ হয়েছে ৮৩৯কোটি টাকা।
এজাড়া মেঘনা নদীর ভাঙন হতে পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৭ দশমিক ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং সাথে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার ড্রেজিং রয়েছে এই প্রকল্পের মধ্যে। যার ব্যায় নির্ধারণ হয়েছে ৫৫৩ কোটি টাকা।
এর বাইরে সদর উপজেলার চরকাউয়া, চাঁদমারী এবং জাগুয়া এলাকায় ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং চরমোনাই ও লামছড়ি এলাকায় ৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং প্রকল্প রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। যার প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩৫ কোটি টাকা।

আপনার মতামত লিখুন :