মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও বরিশালে ইলিশের বাজার হঠাৎ চড়া

NEWSNEWS
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  03:28 AM, 27 September 2021

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও বরিশালে ইলিশের দাম চড়া। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম মণ প্রতি ৪ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানা গেছে। এ কারণে এবার ইলিশের দাম কেজিতে ৭০০ টাকার ওপরে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রুপালি ইলিশ। যদিও গত বছর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বেচাকেনা হয়েছে।

 

এই অবস্থার মধ্যে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ৪ অক্টোবর।বরিশাল ইলিশ মোকাম সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আগ মুহূর্তে গত এক সপ্তাহে ইলিশের দাম মণ প্রতি বেড়েছে ৪ হাজার টাকা। মৎস্য অধিদপ্তর ও ব্যবসায়ীরা ভারতে রপ্তানির অজুহাতে ইলিশের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৎস্য খাতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক ছায়ায় থাকা ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে গোটা মৌসুমেই ইলিশের দাম চড়া রয়েছে।

 

 

গত শুক্র ও শনিবার বরিশাল মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনাসহ স্থানীয় নদীর ইলিশ উঠেছে বেশ। এলসি সাইজের ইলিশই বেশি। ভোলা, পাথরঘাটা, মেহেন্দীগঞ্জ থেকে ট্রলার ভরে ইলিশ আসছে। তবে এলসি সাইজের ইলিশ ভারতে রপ্তানির জন্য ব্যবসায়ীরা দ্রুত মোকাম থেকে লুফে নিচ্ছেন। মোকামে একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, টুটুল মামা ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছেন। তাই এলসি সাইজের মাছ ছেড়ে দিতে হচ্ছে।এদিকে, এলসির খবরে বাজারে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। সাধারণ ক্রেতারা হাটবাজের সস্তায় আর ইলিশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

 

 

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সদস্যসচিব কাজী এনাতে হোসেন শিবলু গত ২২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেন, ‘ইলিশের মৌসুমে অশুভ রাজনৈতিক প্রভাবে মাছ খেতে পাড়ছেন না বরিশালবাসী।’ জানতে চাইলে শিবলু বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইলিশের দাম ঊর্ধ্বমুখী রেখেছেন। যিনি এই সিন্ডিকেট করছেন তাকে রাজনৈতিক প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।বরিশাল মৎস্য মোকামের আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, ‘শনিবার প্রায় ৫০০ মণ ইলিশ উঠেছে। এর সবটাই স্থানীয় মাছ। তিনি জানান, বিদেশে রপ্তানির কারণে ইলিশের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে ৪ হাজার টাকা বেড়েছে। আগামী ৪ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞার আগে ইলিশের দাম কমতে পারে বলে তাঁর ধারণা।জানতে চাইলে বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস জানান, স্থানীয় নদীর ইলিশই এখন মোকামে পাওয়া যাচ্ছে।

 

 

শনিবার তিনি বরিশাল মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন প্রায় ৫০০ মণ ইলিশ মোকামে উঠেছে। এর মধ্যে এলসি সাইজের (৬০০-৯০০) ইলিশ ৩ দিন ধরে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নীরব হোসেন টুটুল একাই দৈনিক প্রায় ২০ টন ইলিশ বরিশাল থেকে রপ্তানির জন্য পাঠাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শনিবার এলসি সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৪০ হাজার টাকা, কেজি সাইজের ইলিশ ৪৯ হাজার টাকা এবং এলসির নিচের (ভ্যালকা) সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৩০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।’গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের মণ প্রতি ৪ হাজার টাকা এবং কেজি প্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবার কেজি প্রতি প্রায় ৩০০ টাকা বেশি। মৎস্য কর্মকর্তা বিমল দাবি করেন, রপ্তানির প্রভাব নয় ইলিশের দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল।

 

 

তবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানির কারণে বরিশালেও ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে।’ চলতি মৌসুমে ইলিশ সস্তায় কেন ইলিশ কিনতে পারেনি সাধারণ মানুষ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন না পারলে পরবর্তীতে পারবে।’ কিন্তু আগামী মাসের শুরুতেই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট সময়ে থাকবে।’ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের দাম বেড়েছে কি না এ প্রসঙ্গে তিনি কোনো জবাব দেননি।

আপনার মতামত লিখুন :