বরিশালে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ পরিচয়ে জাটকা ও রেণুপোনা গাড়ি রফাদফা
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ওরা কারা!
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীতে গভীর রাতে মাছের গাড়ি থামিয়ে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি ও জাটকা ইলিশ রেণুপোনা’র গাড়ী পাড় করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ দাবি করে জাটকা ইলিশ,রেণুপোনার গাড়ী আটকিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেন। কিন্তু তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারধরের শিকার হয় মাছ ব্যবসায়ীরা।
আবার কিছু কিছু সময় স্থানীয় জনতা ও পুলিশের রোষাণলে পড়ে সটকে পড়তে বাধ্য হয় তারা।
এনিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে দপদপিয়া সেতু (টোল প্লাজা) এলাকায় সাংবাদিক ও ছাত্র লীগ পরিচয় দিয়ে রেণুপোনাসহ দুইটি গাড়ী আটকিয়ে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলা টুংঙ্গীবাড়ীয়া ইউনিয়নের লাহারহাট ঘাট ও বাকেরগঞ্জ গোমা ফেরীঘাট থেকে দুটি ট্র্যাকে রেণুপোনার গাড়ী বরিশাল ভোলা মহাসড়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে ট্র্যাক দুটি খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। দপদপিয়া সেতু টোল প্লাজা পাড় হতেই গাড়ী দুটি আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক সোর্স বলেন, রুপাতলী এলাকার স্থানীয় ছাত্র লীগ ও সাংবাদিকরা জাটকা ইলিশ, রেণুপোনার গাড়ি পাড় করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার যাহার নং চট্র মেট্রো গ-১১-৫৩৬৭ ও বেশ কয়েকটি মটর সাইকেল মিলে এসব রেণুপোনা ট্র্যাক পাড়াপাড় পরে দেয়।
জানা গেছ- গত ( ৮ নভেম্বর) রাত ১২ টার পরে নগরীর আমতলা মোড় এলাকায় একটি মাছের ট্রাক আটকায় সাংবাদিক ও ছাত্র লীগ পরিচয়দানকারী ২০/২৫ জনের একটি দল। পরে তারা গাড়িতে জাটকা রয়েছে দাবি করে মাছের বস্তা খুলে দেখতে চান।
এ সময় ওই গাড়ির ড্রাইভার নেমে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেকে বিপ্লবি টিভি নামের একটি অনলাইন পত্রিকার পরিচয় দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
তখন ড্রাইভার বলেন, পুলিশ প্রশাসন ছাড়া সাংবাদিক বা ছাত্র লীগ মাছের গাড়ি আটকিয়ে দেখার অনুমতি আছে কিনা? সাংবাদিক ও ছাত্র লীগ পরিচয়দারকারী বলেন আমাদের সাথে পুলিশ আছে।
তখন কোতয়ালী মডেল থানার টহল টিম এসে হাজির হন। তিনি হাজির হয়েই অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তা নেই জানতে পেরে চলে যান।
পরক্ষণেই স্থানীয়রা জড়ো হয়ে মৎস্য কর্মকর্তা ছাড়া মাছে গাড়ি আটকাতে পারবে কিনা জানতে চায়। স্থানীয়দের নানামুখি প্রশ্নে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েন সাংবাদিক ও ছাত্র লীগ।
এরপর সুবিধা করতে না পেরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন তারা।
অন্যদিকে একই রাতে নগরীর কাশিপুর বাজার এলাকায় আরেকটি মাছে গাড়ি আটকায় ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় যুবক। পরে তারাও গাড়িতে জাকটা রয়েছে দাবি করে গাড়িতে উঠে মাছের বস্তা খুলে দেখতে চান।
পাশাপাশি ড্রাইভারের কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় টহলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের টিম ও এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের টিম। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সেই ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় যুবক। এর কিছুক্ষনের মধ্যে রহস্যজনকভাবে মাছের ট্রাকটিও চলে যায়।
এদিকে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মাছ ব্যবসায়ীরা।
এই ঘটনার দুদিন আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনে একটি মাছের ট্রাক আটকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এমন সংবাদ পেয়ে মৎস কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাঁচ বস্তা (প্রায় ১৫ মণ) জাটকা ইলিশ মাছ জব্দ করেন। এ সময় ওখান থেকে দুই বস্তা মাছ দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুই বস্তা মাছ দেয় মৎস কর্মকর্তা।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে মাছের গাড়ি আটকে অহরহ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে বলে দাবি মাছ ব্যবসায়ীদের। তারা এর থেকে প্রতিকারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তেক্ষেপ কামনা করেছেন।
বরিশাল মহানগর সাবেক ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক অসিম দেওয়ান বলেন, রাতের আঁধারে ছাত্র লীগ পরিচয় দিয়ে যদি কেউ মাছের ট্র্যাক আটকায়। তাদের ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হোক।
কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক ( তদন্ত) কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল বারী বলেন, এধরণের ঘটনা শোনা যায়, তবে কেউ অভিযোগ বা মামলা করেনি। যদি এধরণের কোনো ঘটনা ঘটে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম জানান,এধরণের কোনো ঘটনা বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি কেউ অভিযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।