লঞ্চ রুটে জিম্মি কর্মস্থলমুখী যাত্রী
গ্রামের বাড়িতে পরিবারের প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব শেষ করে এবার কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধে নেমেছেন দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ রুটে গত ২-৩ দিন ধরে এই যাত্রীচাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে নদীপথে যাত্রী চাপ একটু কমলেও এই ঈদ-পার্বণে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এই সুযোগে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। সুযোগ পেয়ে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫ ভাগ বেশি ভাড়া আদায় করে নেয়। তবে তাদের দাবি, তারা সরকারি রেটের চেয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা থেকে তাদের যাত্রীশূন্য হয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে। তাই সাধারণ সময়ের চেয়ে একটু বেশিই ভাড়া তারা নিচ্ছেন। তবে বিআইডব্লিউটিএর দাবি ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরিশাল নদীবন্দরে গত দুদিনের তুলনায় সোমবার যাত্রীচাপ একটু কম ছিল। তবু ৮টি লঞ্চে ঢাকায় ফিরেছে মানুষ। যাত্রীচাপ বেশি থাকায় লঞ্চের টিকিট যেন সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরেও কেবিনের টিকিট পাননি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম জানান, তিনি বিভিন্ন লঞ্চ কাউন্টারে ঘুরেও টিকিট পাননি। পরে ডেকে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সেখানেও দুর্ভোগের শেষ নেই।
সাধারণ সময়ে যে ডেক টিকিট ২০০ বা ২৫০ টাকা করে নিত। তা এখন ৪০০ টাকা নিতে হবে। এর প্রতিবাদ করলে তারা বলে সরকারি রেটের চেয়েও কম নিচ্ছে।
শুধু সিয়ামই নন, বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদ ইমরান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমরা লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ৮শ ও এসি ৯শ টাকায় পেয়ে যাই। এখন সেই কেবিন ১২শ টাকা। একইভাবে ১৫-১৬শ টাকার ডাবল কেবিন এখন ২২শ টাকা। এটা কেন হবে? আমরা এই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চাই।
নগরীর কয়েকটি লঞ্চ কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাবল ট্রিপ দিতে হয় ঈদের সময়। যার কারণে এক প্রান্ত থেকে যাত্রী ছাড়াই ফিরে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে তাদের জ্বালানি খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এই খরচ কমাতে সরকারি রেটের চেয়েও কম ভাড়া নেওয়া হয়। তবে সাধারণ যাত্রীরা মনে করেন তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। মূলত স্বাভাবিক সময় আমরা সরকারি রেটের অনেক কমে যাত্রী পরিবহণ করে থাকি। ঈদের সময় বাড়তি ফুয়েল খরচ ওঠাতে একটু বেশি নেওয়া হয়।
এর আগে শনিবার ১১টি ও রোববার ১০টি লঞ্চ রাখা হয়েছে যাত্রীসেবায়। সোমবার যাত্রীসেবায় থাকা লঞ্চগুলো হচ্ছে কীর্তনখোলা ১০, প্রিন্স আওলাদ ১০, কুয়াকাটা ২, মানামী, সুরভী ৭, অ্যাডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ১৬ ও পারাবত ১২। এছাড়া ঝালকাঠি ও হুলারহাটের একটি লঞ্চ বরিশাল ঘাট ভায়া হয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, সোমবার ৮টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ভায়া রুটের আরও দুই লঞ্চ ছেড়ে যাবে। যাত্রীচাপ বাড়লে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন বলেন, যাত্রীসেবায় বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে পারে সে বিষয়ে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়তি লঞ্চ ভাড়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডেকের যাত্রীদের ভাড়া হয় ৪১২ টাকা কিন্তু ৪শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর কেবিনের আগের ভাড়াই নেওয়া হবে। আমরা সরকারি রেট উপেক্ষা করছি না।