দৌলতপুরে সাতদিনে ছয় খুন: জনমনে আতঙ্ক
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রতিদিনই ঘটছে হত্যাকাণ্ড। উদ্ধার হচ্ছে লাশ। গত সাতদিনে দৌলতপুরে ছয় খুনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে দৌলতপুরের বাতাসে এখন লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে পরিবেশও হয়ে উঠেছে ভারী। প্রশাসনের নজরদারি ও তৎপরতা বাড়লেও স্বস্তি মিলছে না দৌলতপুরবাসীর। দিন কাটছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা নিয়ে। জনমনে ছড়িয়েছে আতঙ্ক।
মঙ্গলবার (৫ মে) সকাল ১০টার দিকে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকির মোল্লা (৪৫) নামে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর শাহাপুর গ্রামে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির মোল্লা শাহাপুর গ্রামের আরব মোল্লার ছেলে। পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের ১৩টি মামলা ছিল।
একই এলাকার আবু মন্ডলের কৃষি জমি জবর দখল করে রাখার অভিযোগ ছিল জাকির মোল্লার বিরুদ্ধে। আবু মন্ডল অনেক দেন দরবার করেও ওই জমি দখলমুক্ত করতে পারেননি। এবার ওই জমিতে মরিচ চাষ করেছিলেন জাকির মোল্লা। মঙ্গলবার সকালে জাকির মোল্লা ওই ক্ষেতে গেলে আবু মন্ডলের লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় জাকির মোল্লার লোকজন প্রতিপক্ষের চারটি বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিস দল ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।
এর আগে চিলমারীর চরে রাস্তার জন্য মাত্র এক শতাংশ জমি নিয়ে শিকদার ও খা পক্ষ বনাম মন্ডল পক্ষের মধ্যে প্রায় দুইমাস ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে শিকদার ও খা পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্বিত হয়ে মন্ডল পক্ষের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে।
এ সময় তারা পেট্রোল ঢেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। হামলায় ৬জন আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধসহ ১৬জন আহত হয়। আহতদের কুষ্টিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অগ্নিদগ্ধদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দুপুরে চিলমারী উত্তরপাড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন গেদার ছেলে আক্তার মন্ডল (৩৭) ও মৃত নবীর মন্ডলের ছেলে দিনু মন্ডল (৭০) মারা যান।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৪ মে ) সকাল ৮ টার সময় অগ্নিদগ্ধ ফারুক মন্ডল (২৪) নামে আরো এক জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফরুক মন্ডল অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত দিনু মন্ডলের ছেলে। এ নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাড়ালো পিতা-পুত্রসহ ৩জনে।
এ ঘটসায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এখনও মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যু পথযাত্রী অবস্থায় লাইফ সার্পোটে রয়েছেন একই এলাকার কালা কাজীর ছেলে অগ্নিদগ্ধ সাইদুল কাজী (২২)। আগুনে ইকবাল মন্ডল, মোজাম্মেল মন্ডল, জহুরুল মন্ডল ও রানা মন্ডলের বাড়ি পুড়ে ভষ্মিভূত করা হয়। এসময় হামলকারীরা ওইসব বাড়ি থেকে গরু, ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র ও সম্পদ লুট করে নিয়ে যায় এবং কেটে ফেলে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ঘটনায় মন্ডল পক্ষের মোজাম্মেল মন্ডল বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দৌলতপুর থানায় হত্যার চেষ্টা ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধারায় ৭৩জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন যার নং-৭০।
মামলার সূত্র ধরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ও র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের অভিযানিক দল শুক্রবার রাতে চিলমারীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আসামীরা জামিনে ছাড়া পেলে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।
হত্যাকাণ্ড ও লাশ উদ্ধারের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ বিভিন্ন কারনে যেসকল ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং হত্যাকান্ড ও লাশ উদ্ধার হয়েছে সেসব ঘটনায় দৌলতপুর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকী আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।