জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিন চক্র আটক
রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় দিনে দুপুরে মাইকিং করে হাজার হাজার নারীকে জরায়ু ক্যান্সারের নকল ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। চার হাজার নারীর শরীরে টিকার বদলে দেয়া হয়েছে শুধুই পানি। এছাড়া জন্ডিসের টিকার সাথে পানি মিশিয়ে আরও দুই হাজার নারীকে দেয়া হয়েছে নকল টিকা। এভাবে প্রতারক চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত চার কোটি টাকা। ব্যানার, পোস্টার আর মাইকিং করে এমন প্রতারণার পর প্রশ্ন উঠেছে- কয়েক বছর ধরে এই নকল ভ্যাকসিন দেয়া হলো, অথচ কেউ দেখলো না?
নকল টিকা দিতে মাইকিং করে চালানো হয় প্রচারণা। দেয়ালে লাগানো হয় অসংখ্য পোস্টার, বিতরণ করা হয় লিফলেট। সহজে ও হাতের কাছে মরণব্যাধি জরায়ু ক্যান্সারের এ টিকার কথা শুনে ভ্যাকসিন নেন অনেকেই। এক ভূক্তভোগী বললেন, নকল টিকা প্রতারণার শিকার হওয়াদের মধ্যে আমি একজন। সকাল থেকে ওদের মাইকিং শুনতাম। এখানকার স্কুলগুলোতেও এর ক্যাম্পেইন চলতো। ওদের একটা টিম থাকে। ওখানে যাওয়ার পর ওরা আমাদেরকে কনভিন্স করে ফেলতো। এতো বছর ধরে ওরা মাইকিং করলো কেউ খেয়াল করলো না! এর দায় কে নেবে?
এমন নকল ভ্যাকসিন শরীরে নিয়েছেন আরও ৬ হাজারের বেশি নারী। তিন ডোজের টিকার জন্য এদের প্রতিজন খরচ করেছেন সাড়ে সাত হাজার টাকা করে। রাজধানী ও এর আশেপাশের ১৪৮টি স্কুলে রীতিমত ক্যাম্প করে দেয়া হয়েছে এসব নকল টিকা।
জানা গেছে, শুরুতে অন্তত চার হাজার নারীর শরীরে টিকা হিসেবে শুধু পানি দেয়া হয়েছে। পরে অনেকের সন্দেহ হলে অন্য পথে হাঁটে প্রতারকরা। হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনের সাথে পানি মিশিয়ে বানানো হতো ‘সারভারিক্স’ নামের নকল ভ্যাকসিন।
সম্প্রতি, স্থানীয়রা নকল টিকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ডিবি পুলিশকে খবর দিলে গ্রেফতার করা হয় এ চক্রের ৫ সদস্যকে।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও বিভাগ ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম সবুর বলেন, দুই-তিনটা প্রতিষ্ঠানের নাম আসছে তদন্তে। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে বলে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাচ্ছি না। কাউকে পাওয়া গেলে তাদের থেকেও তথ্য জানা যেতো। এছাড়া একটি চক্র গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এরকম কার্যক্রম চালাতো বলেও শুনেছি। এটিও আমরা তদন্ত করে দেখছি।
এমন কাণ্ডে প্রশ্ন উঠেছে, দিনের পর দিন এমন প্রতারণা সরকারের কারও চোখে পড়লো না কেন? দেশে লোক ঠকানো কী এতোই সহজ!
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইকবাল বলেন, এরকম ঘটনা দেশে প্রায়ই ঘটে। শাহেদ, ড. সাবরিনার ঘটনাগুলো দেখুন। এসব ঘটনা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। পানিশমেন্ট অবশ্যই দরকার। শাহেদ সাবরিনা থেকে শিক্ষা নেইনি আমরা। এগুলো থেকে শিক্ষা নিলে আমরা কেউ বিপদে পড়বো না।
অনেকেই বলছেন স্বাস্থ্য অধিদতর কিংবা ওষুধ প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারেন না। এমন স্পর্শকাতর টিকা নিয়ে জনগণের সাথে মহা প্রতারণা হয়ে গেলো- অথচ এ কথা জানলোই না কেউ?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, এই কার্যক্রম স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার কারো চোখেই পড়লো না! ভ্যাজসিন যারা নিয়েছেন তারাও বুঝতে পারলেন না! এত অভিনব পদ্ধতি এরা ব্যবহার করে যে যে বুঝতে বুঝতেই ঘটনা ঘটে যায়।
প্রসঙ্গত, জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের জন্য আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে এসপিবি ভ্যাক্সিন কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার তাগিদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের।